কিন্তু সেটা আমাদের অনেকের পরিবার থেকেই মানতে চায় না। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার অথবা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে জীবনটা ব্যর্থ মনে করেন অভিভাবকরা।
আমার স্কুল জীবনটা কেটেছে গ্রামে। শহরের লেখাপড়া, হালচাল কিছুই বুঝতাম না। অভিভাবকের ইচ্ছেয় আর ভালো কলেজে পড়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে ভর্তি হই ঢাকার এক নামকরা কলেজে।
শহরের কলেজে, পড়ানো, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং অভিভাবকদের যে সতর্কতা দেখছি, গ্রামে খুব একটা দেখিনি। ফলাফলের দিক থেকে আমরা তাই পিছিয়ে থাকি অনেক সময়। আর তাই আমরা গ্রামের যারা, পেছনে পড়ে আছি অনেকটাই।
শহরে স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষ যেমন কোনো সমস্যা হলে অভিভাবকদের জানিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করে, অধিকাংশ গ্রামে তার কিছুই হয় না।
আমার মনে আছে মহাখালী ওভার ব্রিজ নিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অনেকবার পড়েছি কিন্তু ঢাকার ছেলেমেয়েরা তা নিজের চোখেই দেখে শিখেছে।
স্কুলে পড়ার সময়ই হ্যালোতে সাংবাদিকতার সুবাদে কিছু শহরের বন্ধুর সাথে কথা হয়। তখন আমার সাথে তাদের পার্থক্য বুঝতে পারি। তারা যা খুব সহজে জেনে বা বুঝে যায়, আমরা গ্রামে থেকে তা খুব সহজে জানতে পারি না। আর জানলেও অনেক পরে জানতে পারি।
শিক্ষার দিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যায়, গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলেও শহরের ভালো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় কম। আর তাই গ্রামের অনেক পরিবারে সচেতনতা কম থাকায়, মাধ্যমিকের পরে সন্তানকে বিদেশে কিংবা অন্য কোথাও কাজে পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু দেশে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাকে অভিভাবকসহ, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উৎসাহিত করার অভাবে আমরা গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা বেশি পিছিয়ে পড়ছি। আর চাকরির অভাবে লাখো বেকার তৈরি হচ্ছে প্রতি বছর।
শহরের মতো গ্রামে যদি শিক্ষকদের ভালো পাঠদানের প্রশিক্ষণ ও পরিবারে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমরা গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা আর পেছনে পড়ে থাকব না। প্রতিটি স্কুল কলেজে যদি সেমিনার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আরো নানামূখী জ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয় তবে শহরে এসে তাল মিলিয়ে চলতে কষ্ট হবে না।