চাচাতো, মামাতো,খালাতো, ফুফাতো,ভাইবোনরা মিলে বাড়ির ছাদে চড়ুইভাতির আয়োজন করতাম। সেদিন পুরো বাড়িতে হৈ হুল্লোড় পড়ে যেত।
বাবুর্চি ছিলাম আমরাই। মিলেমিশে চড়ুইভাতির খাবার রান্না হতো।
যেদিন চড়ুইভাতি হবে তার আগের দিন থেকেই আনন্দে ঘুম হতো না।
সকাল বেলা থেকেই শুরু হতো রান্নার আয়োজন। চাঁদা তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম বাজার করতে।
কী রান্না হবে ঠিক করতাম আমরা ছোটরাই। তালিকা ঠিক করতে লেগে যেত ধুন্দুমার কাণ্ড। এ এটা খাবে না, ও ওটা খাবে না। এরপর বড়দের হস্তক্ষেপে ঠিক হতো তালিকা।
রান্নার দায়িত্ব যার, তাকে থাকতে হতো খুব সাবধান। একটু ঊনিশ বিশ হলেই তো সর্বনাশ!
রান্নার ফাঁকে মজার মজার কৌতুক, গল্প, গান চলত। অনেকেই বেসুরো গলায় গাইতো। তবুও বড় বলে বাধ্য হয়ে হাততালি দিতে হতো।
তবুও সময় কাটতো না। শুধু মনে হতো রান্না শেষ হতে কত দেরি!
সময় কাটানোর জন্য লুডো, দাবা, ক্যারাম, গানের কলি নানা রকম খেলার আয়োজন করা হতো।
আমরা আবার বড়দের সাহায্যও করতাম। কেউ পানি এনে দিত, কেউ করত কাটাকুটির কাজ।
রান্নার মাঝে মা, খালারা এসে একটু উঁকিঝুঁকি দিতেন। দেখতেন সব ঠিক আছে কিনা।
অন্যদিন খাবারের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী না হলেও চড়ুইভাতির দিন ক্ষুধায় সবার পেট চোঁ চোঁ করত।
যখন রান্না শেষ হতো তখন ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে যেতাম খেতে। আহ! কী স্বাদ! কী সুগন্ধ সে খাবারের।
সবাই ব্যাকুল হয়ে যেত। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভুনা খিঁচুড়ি আর ডিমের ঝোল যেন সাক্ষাৎ অমৃত ছিল। সবার খাওয়া দেখে মনে হতো, ওরা কত দিনের ক্ষুধার্ত! খুব তৃপ্তি নিয়ে খেতাম সবাই।
খাবার খাওয়া শেষে সবাই মিলে ছাদে ঘুড়ি উড়াতাম। এ ওর ঘুড়ি কেটে দিলেই সবাই মিলে চিৎকার করে উঠত, ভো কাট্টা! কার ঘুড়ি কতো উপরে উড়তে পারে তা নিয়ে হতো প্রতিযোগিতা।
এত সবের মধ্যে মারামারিটা বাদ থাকে কি করে! কথা না শুনলেই আপু পিঠে দিত এক কিল। কিল খেয়ে কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় তুলতাম।
এরপর শুরু হতো বড়দের কাছে গিয়ে নালিশ করা। সবাই আপুকে বকা দিলে আপু এসে আবার রাগ ভাঙাতো।
সন্ধ্যার আগে আগে চায়ের সাথে বিস্কুট খেয়ে চড়ুইভাতির মজা শেষ হতো।
শৈশবের চড়ুইভাতির অনেক মজা, অনেক আনন্দ আর হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়ে শেষ হতো। চড়ুইভাতির সাথে শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
চড়ুইভাতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কত খুনসুটি, রাগ, বায়না, আবদার!
ছেলেবেলার চড়ুইভাতি শেষ হয়েছে, রেশ রয়ে গেছে আজও।