আমার বন্ধু আবির

নতুন স্কুলে যাদের সাথে আমার প্রথম পরিচয়েই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তাদের একজন আবির কৈরি।
আমার বন্ধু আবির

প্রথম দিন ক্লাসে আবির বসেছিল আমার পেছনের বেঞ্চে। প্রথম কথাতেই বুঝতে পারি ও অনেক খোলা মনের মানুষ। কদিনের মধ্যে ওর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।

বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে খুব পছন্দ করত ও। এক বারের জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহের কথা আমার খুব মনে পড়ছে আজ। এই ইভেন্টে আমার সাথে আবিরও অংশ নিয়েছিল। ওর তৈরি সায়েন্স প্রোজেক্টগুলি অন্য রকম ছিল। ওর প্রোজেক্ট উপস্থাপনার ধরণ ছিলো সবার চেয়ে আলাদা। পুরস্কারও জিতে নিত সে।

স্কুলে আমরা সায়েন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিই। সায়েন্স ক্লাবের কাজ নিয়ে কথাবার্তা হতো, আড্ডা হতো প্রায়ই।

ও মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে ছুটে আসত। আমিও আবিরকে নতুন নতুন প্রোজেক্টে সাহায্য করতাম। 

কিন্তু হুট করেই সব শেষ হয়ে গেল। ৪ জানুয়ারি দুপুরের কথা। ফেইসবুকে ঢুকলাম। ঢুকতেই সামনে এলো একটি স্টেটাস। সেটা দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সেখানে লেখা ছিল, "আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আবির কৈরি আজ দুপুরে মারা গেছে।”

দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মনে হলো, আমি হয়তো ভুল দেখছি। কিছুক্ষণ পর বন্ধুদের ফোনকলে নিশ্চিত হলাম সত্যি, আবির আর নেই। কোনো এক অজানা কারণে আত্মহত্যা করেছে ও।

তখন আবিরের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকল। আমার কানে ভাসতে থাকল ওর কথাগুলো। ওর সাথে টিফিন টাইমের আড্ডার কথা মনে পড়ে চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো।

নতুন বছরে প্রথম স্কুলে গিয়ে সবার সাথেই দেখা হলো। শুধু আবির কোথাও নেই, আবির নেই।

আবিরকে এখনও অনেক অনুভব করি। অনুভব করি ওর শূন্যতাকে। ও আর কোনদিন আসবে না, কোনোদিন আমাকে ডাকবেও না। বলবে না, "বন্ধু কি খবর?” 

[আত্মহত্যা কি কোনো সমাধান? রাগ বা জেদের বশে যে কাজ আবির করেছে তাতে শুধু ওর জীবনই ধ্বংস হলো। মা বাবা কষ্ট পেলেন, কষ্ট পেল বন্ধুরা।- সম্পাদক]

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com