দুর্ভাবনায় কেটে যায় নির্ঘুম রাত

একটু আগেও আমার হাতে ছিল মাউস, চোখ ছিল কম্পিউটার মনিটরে। ভিজিট করছিলাম নিউজ পোর্টালগুলো। নতুনধরনের খবর খুঁজে পাচ্ছিলাম না!
দুর্ভাবনায় কেটে যায় নির্ঘুম রাত

প্রতিদিনের মতোই দেখছিলাম খুন, শিশু ধর্ষণ, শিক্ষা-বাণিজ্যিকীকরণ, প্রশ্নফাঁস ও দুর্নীতির মতো গতানুগতিক রাজনৈতিক ও অপরাধের খতিয়ান।

যে খবরগুলো একজন কিশোরকে শুধুই কষ্ট দেয়। মনের মধ্যে হাজারবার প্রশ্ন জাগায়, আমরা কী ভালো আছি? ভালো আছে শিশুরা? দিন এনে দিন খাওয়া লোকটার পরিবার? ভালো আছে কী এ দেশের সাধারণ মানুষ?  

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে লাগবে না কোনো বই, কোনো অর্থ।

উত্তর আশেপাশেই আছে। শুধু থাকতে হবে উত্তর খুঁজে পাওয়ার মত দুটি চোখ আর থাকতে হবে অনুভব করার মতো একটি মন।

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, কী হবে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে? আগে নিজে বাঁচি তারপর অন্যদের নিয়ে ভাবব।

আপনি যে সময়ে এসে এই কথাগুলো ভাবছেন ঠিক একই সময়ে একজন কিশোর খুঁজছে ভারসাম্যময় একটি সমাজ। যেখানে থাকবে না কোনো অভাব, বৈষম্য, স্বজন হারানোর আহাজারি, সন্তান হারানো মায়ের আর্তনাদ, শোষণ-নিপীড়ন ও খুন-ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ। এমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় নির্ঘুম রাত।

আমি অনেক রাত কাটিয়েছি বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তার মধ্য দিয়ে। ভেবেছি কীভাবে একটা দুর্নীতি মুক্ত, পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়া যায় তা নিয়ে। আরও ভেবেছি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যাবস্থা, বর্তমান তরুণ প্রজন্মসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে।

ভাবতে গিয়ে দেখেছি তরুণ প্রজন্ম সমাজের প্রতি কি উদাসীন! আমার অনেক বন্ধু আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই আমার থেকে বয়সে বড় কেউ সমবয়সী কেউ বয়সে ছোট।

তাদের সাথে কথা বলে যে জিনিসটা বুঝতে পেরেছি, তা হল কেউ নিজের খেয়ে অন্যের কথা, সমাজের কথা ভাবতে চায় না। সবাই নিজেরটা নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। সমাজকে নিয়ে ভাবাটা এক ধরনের ঝামেলা মনে করে তারা।

এ সময় আমার প্রিয়একজন বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর একটি উক্তি খুবই মনে পড়ছে, তিনি বলেছিলেন, সংগ্রাম আর বাধাবিঘ্নের মধ্য দিয়ে মানুষ গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সমস্যা একজন মানুষকে, একজন মানুষের চরিত্র ও চেতনা গড়ে তোলে।

কথাটা আসলেই সত্য কিন্তু কষ্টের বিষয় হল আশেপাশের মানুষগুলো জীবনের বাধাবিঘ্নকে ঝামেলা বলেই এড়িয়ে যায়। ঝামেলাগুলোকে জয় করে কেউ একটা সুন্দর সমাজ গঠনের ভুমিকা পালন করতে চায় না। সবাই যে এমন তা নয়। অনেকেই ভাবে রাষ্ট্র ও সমাজকে নিয়ে, তবে সেটা সংখ্যায় অনেক কম।

কৈশোর হলো এমন একটি সময় যে সময়ে ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব গঠন করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার শপথ গ্রহণ করে। আমরা যদি সফল মানুষদের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে তারা প্রত্যেকেই কৈশোর উপভোগ করেছেন ভালো কিছু কাজকর্মের মাধ্যমে যেমন- বই পড়া, প্রচুর খেলাধুলা, সোশ্যাল ওয়ার্ক, বিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে। কিন্তু হতাশ লাগে যখন দেখি, এখনকার তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তারা মনে করে নিজে ভাল থাকতে পারলেই যেন সব ভাল।

আসলে আপনি তখনই ভালো থাকবেন, যখন আপনার আশেপাশের মানুষ ভালো থাকবে। ভালো থাকার মানে হল সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো থাকা। আপনি একাই ভালো থাকার চেষ্টা করবেন আর আশপাশের মানুষ থাকবে শুধুই দুঃখে-কষ্টে, তখন আপনি চাইলেও ভালো থাকতে পারবেন না। কারণ চারপাশের পরিবেশ আপনাকে প্রভাবিত করে। তাই নিজে ভালো থাকতে চাইলে অন্যদেরকেও ভালো রাখতে হবে।

এই বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তায় কেটে যাচ্ছে আমার কৈশোর, কিন্তু বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোই আমাকে উদ্যমী করে তোলে সমস্যার সমাধান করতে। আজকের কিশোররাই সৃজনশীল ভাবনা আর  কাজের মাধ্যমে দেশে ঘটাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com