কিন্তু এবার আমার মামাতো বোন সমাপনী পরীক্ষার পরদিন থেকেই শুরু করেছে হাই স্কুলে ভর্তি কোচিং। তার কোনো অবসর নাই। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিলে বইয়ের সবকিছুই জানা উচিত। তাকে আলাদা করে কোচিং-এ ভর্তি করে অভিভাবকরা ঠিক কী প্রত্যাশা করেন তা আমার জানা নাই।
কোচিং করাটা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। আমাদের সমাজে লেখাপড়া বলতে সকাল সকাল উঠে ভারি ব্যাগ নিয়ে কোচিং সেন্টার, সেখান থেকে স্কুল, স্কুল থেকে এসে গৃহশিক্ষক, গৃহশিক্ষকের পর সন্ধ্যায় নিজে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসবের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষা একটাই পাওয়া যায়, সকালে ঘুম থেকে ওঠা। এছাড়া এসব কোচিং এবং গৃহশিক্ষকদের কাছ থেকে শুধু পড়া যায়, শেখা বা জানা যায় না।
শিক্ষা পদ্ধতি কখনোই এরকম হওয়ার কথা নয়। ফ্রেড্রিক ফ্রোবেল যখন কিন্ডারগার্টেনের ধারণা দেন, ভেবেছিলেন বাচ্চারা খেলতে খেলতে দুএকটা অক্ষর শিখবে। কিন্তু এখনকার কিন্ডারগার্টেনে হাইস্কুলের থেকেও বেশি চাপ। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়তে পড়তে আর শেখার সময় থাকে না। আমরা এখন কিছু শেখার জন্য পড়ি না, পড়ি শুধু জিপিএ ৫ এবং সার্টিফিকেটের জন্য।
তাই, সাজেশনের পেছনে দৌড়াই এবং তার চেয়ে এক বর্ণও বেশি জানার চেষ্টা করি না। শুধু সাজেশনে যা আছে, সবকিছু মুখস্থ করি এবং প্রয়োজন শেষ হওয়ার পরই ভুলে যাই।
আমার কাছে মনে হয়, বর্তমানে শিক্ষা হচ্ছে একরকমের ব্যবসা। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, সবার কাছে। শিক্ষক প্রাইভেট পড়াবেন, টাকা দাও প্রশ্ন পাবে, ব্যবসা। শিক্ষার্থী পড়বে, টাকা নেন প্রশ্ন দেন, ব্যবসা। শিক্ষা বিস্তারের জন্য যারা এত পরিশ্রম করেছেন তারা এই শিক্ষা ব্যবসা দেখলে কত কষ্ট পেতেন কে জানে?
এখন আমরা কিশোররা যদি এ অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করি, শিক্ষা নামের ব্যবসা বন্ধ করি, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা না দেই, তবেই সম্ভব প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।