'হ্যালো' ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছে

'হ্যালো' ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছে

প্রশিক্ষণের দু’দিন আগে জানতে পেরেছিলাম, সিরাজগঞ্জ শহরে শিশু সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ হবে। প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে আমাকে আজ সেখানে যেতে হবে।

আমাদের গ্রাম থেকে শহর প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত হেঁটে এসে সেখান থেকে বাসে উঠলাম সাড়ে আটটার দিকে।

বাস তার নিজ গতিতে শহরের দিকে এগুতে লাগল। আর আমি বসে বসে ভাবছি মায়ের কথা। বেরোবার আগে মা বলেছিল, ‘ টাকা খরচ করে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে কী হবে?' মা যাতায়াত ভাড়ার খরচের কথা বলছিলেন।

হ্যালো এবং হ্যালোর প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ঠিকভাবে জানতাম না। তাই এ প্রশ্নের জবাবে আমি নিরুত্তর ছিলাম।

একটু পর পরই বাস থামছে, যাত্রী ওঠা-নামা করছে। লোকাল বাস তাই যেখানে-সেখানেই থামাচ্ছে। বাস শহরে পৌঁছাল একঘণ্টা পরে। বাস স্ট্যান্ড থেকে পৌরসভায় যাওয়ার জন্য রিকশা নিলাম। অবশেষে আমার গন্তব্যে পৌঁছলাম ট্রেনিং শুরুর কয়েক মিনিট আগে।

ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে ট্রেনিং হবে দুই দিন। প্রথম দিনে আমাদের জেলার সিনিয়র সাংবাদিক এবং ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় অতিথি মহুয়া আপুর কাছে শুনলাম, হ্যালো এবং সাংবাদিকতার খুঁটিনাটি। স্বল্প পরিসরে আমাদের মাঝে আলাপ পরিচয় ও আলোচনা হলো। সাংবাদিকতার সহজপাঠ বইটাও আমাদের দেওয়া হলো।

কর্মশালায় আমিই একমাত্র গ্রাম থেকে আসা প্রশিক্ষণার্থী হওয়ায় একটু একটু ভয় এবং লজ্জা করছিল। তেমনি এক নতুন অভিজ্ঞতায় এবং জ্ঞানী-গুণীজনদের মূল্যবান কথা শোনার সুযোগ পাওয়ায় একটু পর পর মনটা আনন্দে নেচে উঠছিল। এক কথায় আমার মাঝে ভয়, লজ্জা এবং আনন্দ মিলেমিশে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছিল।     

আমার ছোট কাকা জেলা শহরেই এক কলেজ হোস্টেলে থাকেন। বুদ্ধি করে প্রথম রাতটা তার কাছেই কাটিয়ে দ্বিতীয় দিনের কর্মশালায় ঢুকলাম।

দ্বিতীয় দিনে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের গ্রুপ ওয়ার্ক করতে বলা হল। মাঠপর্যায়ে গিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি ফেললাম।

ভয়-আনন্দ, রোমাঞ্চকর অনুভূতি আর কাজের ভুল-ত্রুটি শোধরাতে শিখতেই কেটে গেলো দুটি দিন।  

ট্রেনিং শেষে যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম তখন বাসের মধ্যে ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারলাম যে আমার যাতায়াতের খরচ এবং দুদিন স্কুলে যেতে না পারার ক্ষতিটা হ্যালো-র এই প্রশিক্ষণ সুদে-আসলে পুষিয়ে দিয়েছে! 

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com