বাবা বললেন, এই শিশু সাংবাদিক সাহেব

ছোট জীবনে অনেক কিছু করেছি। নানা কর্মশালা ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। এরমধ্যে শিশুসাংবাদিকতার কর্মশালাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাবা বললেন, এই শিশু সাংবাদিক সাহেব

যখন স্কুলে প্রথম এই কর্মশালার ব্যাপারে শুনি তখন মনে হয়েছিল শিশু সাংবাদিকতা একটা সাধারণ ব্যাপার। এ দিয়ে ‘কিছুই’ হবে না। তবে সেখানে যোগ দেওয়ার পর ভুল ভাঙে।

দিনটা ছিল ৩১ অক্টোবর, ২০১৭। কর্মশালাটি হয় সিরাজগঞ্জ পৌরসভার হল রুমে। সকাল ৯টার মধ্যে আমরা সেখানে পৌঁছে যাই। শুরুতে সিনিয়র সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন।

তারপর থেকে একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করে। মনে আনন্দের এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

তবে কষ্ট লাগল এটা ভেবে যে, আমি শুরুতে এটিকে খুব তাচ্ছিল্য করেছিলাম।

তারপর এত বেশি আনন্দ হলো যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অনেক সাংবাদিক আমাদের সামনে বক্তব্য দেন।

তাদের একেকটা কথা আমার কাছে সোনার মতো মূল্যবান মনে হয়।

সাংবাদিকরা তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বুঝতে পারি সাংবাদিকতা সহজ বিষয় নয়। কর্মশালায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাই।

বাস্তব জীবনে সাংবাদিকদের যে একটা খবর সংগ্রহ করতে কত কষ্ট হয় তা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বুঝেছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের শিশু সাংবাদিকদের টিম সংবাদ সংগ্রহ করে। 

জীবনে তো অনেক কিছুই শিখেছি। কিন্তু মাত্র দুই দিনের ‘শিশু সাংবাদিক’ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে যা শিখেছি তার কোনো তুলনাই হয় না। চেনা, অচেনা সব বন্ধু বান্ধবীদের সাথে এক সাথে ছিলাম। তাদের সাথে থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

এখন নিজেকে একজন শিশু সাংবাদিক মনে করি। তাই অন্য সাংবাদিকদের মতো আমিও খবর সংগ্রহ করব। দেশের সব শিশুদের অধিকার তুলে ধরব।

এসব যখন ভাবছিলাম তখনও আমি কর্মশালায়। পাশে ছিল আমার এক বান্ধবী। সে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কি ভাবছি! আমার চিন্তা ভাবনা ছিল একটাই, কিছু একটা করবই। যেটা হ্যালো ছাড়া হবে না। আমি এমন কিছু করব বা লিখব যেটা পুরো বিশ্বের মানুষ দেখবে। খুব বেশি কিছুই ভেবেছিলাম কর্মশালায়। তারপর ভেবে দেখলাম এসব চিন্তা ভাবনা পরে করব। তারচেয়ে সাংবাদিকদের কথা শুনি।

বাসায় আসার পর দেখলাম সবাই অনেক অনেক খুশি। তারপর খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসলাম। কর্মশালার সব কিছু তাদের খুলে বললাম। মোবাইলে তোলা ছবিগুলো দেখলাম।

বাড়ির সবার মাঝে সবচেয়ে বেশি খুশি ছিল আমার আম্মু। আমি যে আমার আম্মুর হাসি মুখটা দেখে কতই আনন্দ পেয়েছিলাম তা বোঝানোর ভাষা আমার নেই।

এরপর একদিন তো হুট করে বাবা ডাকলেন, এই শিশু সাংবাদিক সাহেব’ শোনেন। এরপর থেকে বাবা প্রায়ই আমাকে এভাবে ডাকেন। তা শুনে মনের ভেতর কেমন অনুভূতি হয় তা লিখে শেষ করা যাবে না।

আমি একজন শিশু সাংবাদিক হওয়াতে যতটুকু গর্বিত হয়েছি, তার চেয়ে একজন শিশু সাংবাদিকের মা হয়ে আমার আম্মু সবচেয়ে বেশি গর্বিত হয়েছেন। 

আমার জীবনের এই দিনটি বড় অর্জনের একটা দিন। এটা আমার জীবনের এমন একটা স্মরণীয় দিন যা আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবো না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com