মা যেমন তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখে, ঠিক তেমনি মা-বাবার পরে নালন্দা আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল।
কাল ছিল নালন্দায় আমাদের ফেয়ারওয়েল। বিদায় পর্ব।
আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের ফেয়ারওয়েল দেখতাম আর চিন্তা করতাম ‘ইস ওদের কী কষ্ট! নালন্দাকে, এখানকার বন্ধুদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।’
কিন্তু তখন বুঝতাম না, একদিন ওদের মতো আমাদেরও নালন্দাকে ছাড়তে হবে।
এখন নালন্দাকে হয়তো ওভাবে প্রতিদিন আর দেখতে পাব না, প্রতিদিন আর নালন্দায় যাওয়া হবে না, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা হবে না, কিন্তু নালন্দাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে, এর আদর্শ, এর শিক্ষা, মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
সকাল বেলা স্কুলে গিয়েই আপুদেরকে (শিক্ষকদের) জড়িয়ে ধরা, নালন্দার সিঁড়ির চত্বরটাতে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, টিফিনের সময় বন্ধুরা মিলে চা খাওয়া, দুষ্টামি আর নালন্দার সমাবেশ, খুব মিস করব।
নালন্দার শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিস করব সুমি আপু আর মিরন ভাইয়াকে। আর কেয়া আপুর বকাগুলো! কেয়া আপু আমাদের বাংলা শিক্ষাকর্মী। উনাকে খুব ভয় পেতাম। সেই ভয়েই সবাই সবসময় ক্লাসে বই আনত।
একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। একদিন কেয়া আপু সবাইকে বই বের করতে বললেন। ক্লাসের তিন জন বাদে সবাই বই এনেছিল। কিন্তু যারা আনেনি তারা ভয়ে অন্য সাবজেক্ট এর একটা মলাট করা বইয়ের উপর ‘মাধ্যমিক বাংলা ও সাহিত্য’ নাম লিখে সামনে রাখল।
কাল আমাদের ফেয়ারওয়েলে আমরা খুব মজা করেছি। কেন যেন মনেই হচ্ছিল না নালন্দায় আজ আমাদের শেষ দিন! আর শেষ দিনই বা হবে কেন? মা আর তার সন্তানের সম্পর্কের মধ্যে শেষ বলে কিছু আছে কী? তবুও বারবারই একটা কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল। সেটা হলো–প্রত্যেকদিন সকাল বেলা উঠেই নিজের নিজের পরিবারের পর যেই মানুষগুলোর মুখগুলো দেখতাম, তাদের আর দেখা হবে না!
স্কুল থেকে আসার পর এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। বন্ধুদের সাথে আমার ছবিগুলো বারবার নেড়েচেড়ে দেখছিলাম আর বারবারই গানের লাইন গুণগুণ করে গাইছিলাম, তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি, বন্ধুরা আমার!