ধিক্কার: বঙ্গবন্ধু হত্যার খবরকে অবহেলা করেছিল যারা

শুধু রাজনীতি নয়, সংবাদপত্রের কাজের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততা ছিলো। জীবনের কর্মযজ্ঞে কখনও পত্রিকার মালিক, কখনও সাংবাদিক, কখনও পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি, কখনও বা পরিবেশক ছিলেন তিনি। দরকারে হকারিও করেছেন।
ধিক্কার: বঙ্গবন্ধু হত্যার খবরকে অবহেলা করেছিল যারা

১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবরটি পরদিন দেশের বহুলপাঠ্য  দৈনিকগুলোর শিরোনামে ঠাঁই মেলেনি। এটা বাঙালি  জাতির জন্য নির্মম পরিহাস ও লজ্জার। অপরিমেয় গ্লানির। অথচ এই মানুষটি সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য ভেবেছেন, কেঁদেছেন।  

বাঙলার স্থপতি হয়েও এই মানুষটি সাদাসিধে জীবন যাপন করেছে। পূর্ব বাঙলার মানুষের জন্য কারাবরণ করেছেন, অত্যাচার সয়েছেন। দেশের মানুষকে পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্ত করতে ডাক দিয়েছেন স্বাধীনতার।

পশ্চিম পাকিস্তানিরা মিথ্যা ষড়যন্ত্রে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। এমন কি তার জন্য কবরও খোঁড়া হয়েছিল বলে জানা যায়। সেই মানুষটিকে স্বাধীন ও বিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তোলার সময়টুকু দেয়নি দুর্বৃত্তরা। খুন করেছে তাকে। সেই খুনের খবরটিকেও যেনতেনভাবে প্রকাশ করেছে। এই কি তার প্রাপ্য ছিলো?

অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতাকে হত্যার খবর আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি। কিন্তু এমন নির্মমভাবে একটি শিশুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার নজির কমই আছে। কিন্তু এই খবরটি তখনকার গণমাধ্যম গোপন বা অবহেলা করেছিল এটা বলাই যায়। অথচ একজন শিশু সাংবাদিক হিসেবেও আমি শিখেছি, জনগণ, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে সংবাদপত্র।

বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, “আমরা অনেক কর্মীই রাস্তায় হকারের মতো কাগজ বিক্রি করতে শুরু করলাম। কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস সাহেবই কাগজের লেখা ছাপার ভার নিলেন। সাংবাদিক হিসেবেও তার যথেষ্ট নাম ছিলো। ব্যবহারও ছিলো অমায়িক। সমস্ত বাংলাদেশেই আমাদের প্রতিনিধি ছিল। তারা কাগজ চালাতে শুরু করল। বুদ্ধিজীবী সমাজে কাগজটা খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করতে লাগল”।

বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করার গল্পও ওঠে আসে তার লেখার মধ্যে- “মানিক ভাই তখন কলকাতায় ইত্তেহাদ কাগজের সেক্রেটারি ছিলেন। আমাদের টাকা পয়সার খুব প্রয়োজন, কে দেবে? বাড়ি থেকে লেখা পড়ার খরচা কোনো মতে আনতে পারি কিন্তু রাজনীতি করার টাকা কোথায় পাওয়া যাবে?

আমার একটু সচ্ছল অবস্থা ছিল, কারণ আমি ইত্তেহাদ কাগজের পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলাম। মাসে প্রায় তিনশ টাকা পেতাম। আমার কাজ ছিলো এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করা, আর ইত্তেহাদ কাগজ যাতে চলে এবং নতুন এজেন্ট বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ করা যায় সেটা দেখা”।

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর প্রতিদানে তিনি পেয়েছিলেন সংবাদ সংশ্লিষ্ট লোকদের অবহেলা।

ধিক্কার জানাই তাদের! 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com