আমার লেখার প্রিয়তম পাঠক আর পড়েন না

বাবা দিবস চলে গেল দুদিন আগেই। কিন্তু আমার জীবনের সবগুলো দিনই বাবা আমাকে ঘিরে রাখেন। কারণ বাবা আমার কাছে শুধুই স্মৃতি!
আমার লেখার প্রিয়তম পাঠক আর পড়েন না

অসংখ্য স্মৃতি মনে পড়ছে। একদম ছোটবেলায় আম্মু মারা যাওয়ার পর আব্বুই আমাকে মায়ের আদর দিয়ে বড় করেছেন।

খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানো পর্যন্ত, স্কুলে পৌঁছে দিতে আর স্কুল ছুটি হয়ে গেলে অফিসে নিয়ে যাওয়া সব করতেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন, তিনিই ছিলেন আমার সঙ্গী বা আমি তার। আইনজীবী হিসেবে আব্বুকে খুব ব্যস্ত থাকতে হতো। তবু আমার জন্যে বরাদ্দ সময়টুকুর ওপর কারও দখল ছিল না।

আমার কাছে নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা আর ভরসার নাম বাবা। খানিক কঠোরতার মাঝে সবকিছু আড়াল করে নিজের সুখ আর শান্তি বিসর্জন দিয়েছিলেন যিনি তিনি আমারই বাবা।   

তার অনুপস্থিতিতে যেন আমার খবর পান তাই খুব ছোট বেলাতেই আমাকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেন। আমিতো ফোন পেয়েই খুশি। আব্বুর ব্যস্ততা না বুঝেই যখন তখন তাকে কল করতাম।

বাসায় কেউ একটু ধমক দিলে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে আব্বুকে বিচার দিতাম। সেই সময় প্রাইভেট টিচারের নামে যে কত বিচার দিয়েছি তার তো অন্ত নেই।

সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত আব্বুর সাথে অফিসে যেতে। আব্বুর বন্ধুরা খুব আদর করতেন। লোহার গারদের আড়ালের মানুষদেরও দেখতাম। শুনতাম আব্বুর করা শুনানি। চেম্বারে অবশ্যই আব্বুর চেয়ারটাতে আরাম করে বসতাম। মনে হতো আমিই বিরাট এক মানুষ।

পথে ঘাটে চলতে ফিরতে মানুষ, দারিদ্র্য, মন্দির, মসজিদ, প্যাগোডা,  গৌতম বুদ্ধ, সবকিছু নিয়েই আলাপ করতেন। তিনি কখনও চাইতেন না, আমি কূপমণ্ডূক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠি। ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না তার। সেখান থেকেই আমি আজও সব ধর্মের, গোত্রের, শ্রেণির, রঙের মানুষকে  ভালোবাসতে পারি। সম্মান করতে দ্বিধা হয় না।

আব্বু যখন দেশের বড় কোনো রাজনৈতিক মামলায় জয়ী হতেন, আমি হা করে বসে থাকতাম টেলিভিশনে আব্বুকে দেখার জন্যে। সেদিন আব্বু বাড়ি ফেরার সময় আমার প্রিয় রসমালাই আর বিরিয়ানি আনতে কখনও ভুলতেন না।

আব্বুই শিখিয়েছিলেন অনলাইনে খবর পড়তে হয় কীভাবে। সব কথা তো এই পাতায় লিখে শেষ করতে পারব না। ভিড় করে আসছে অজস্র টুকরো টুকরো স্মৃতি। 

দুপুরে ঘুমাতে চাইতাম না তাই ১০ টাকার একটা পুরস্কার ছিলো ছুটির দিন দুপুরে আব্বুর পাশে ঘুমালে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা চারটার ঘরে পৌঁছালেই উঠে দৌড় দিতাম খেলার জন্য। আজ আমি চাইলেও আর তার পাশে ঘুমাতে পারব না।

আব্বু আমাকে ‘ইভানটিস’ বলে ডাকতেন। বড় হতে শুরু করেছিলাম কিন্তু বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাঙেনি। যদিও দুষ্টুমির জন্য মারও খেয়েছি। খানিকটা ভয়ও পেতাম।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আব্বু আমাকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ‘বই পড়া কর্মসূচি’র সদস্য করে দেন। বই পড়ে অনেকগুলো পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু আব্বু দেখে যেতে পারেননি।

হ্যালোতে লিখছি অনেক দিন হলো, কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় পাঠক সেটি পড়েন না!  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com