সকাল সকাল জাদুঘরে গিয়ে হাজির হলাম। কারণ ঐদিনই ফিরতে হবে সুনামগঞ্জ। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। সাথে ছিলেন আমার ছোট চাচা ও বড় ভাই আজাদ। তিন জনের টিকেট কাটতে লাগল ৬০ টাকা।
জাদুঘর প্রাঙ্গণ নানা রকম গাছে ঘেরা। প্রবেশ দ্বারের দুপাশে রয়েছে দুটি ঐতিহাসিক কামান। ভবনের মেটাল ডিটেক্টর দরজা পেরিয়ে প্রথমেই চোখে পড়ল ভাস্কর্য। ডানদিকে অফিস আর বামদিকে অডিটরিয়াম ঘুরে দেখলাম। নিচের তলায় একটা খাবার দোকানও রয়েছে।
জাদুঘরের ভবনটি চারতলা। ওপরের তলাগুলিতে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। প্রথমেই গেলাম দ্বিতীয় তলায়। প্রথম ঘরটিতে বাংলাদেশের বিশাল এক মানচিত্র।
এর পর একে একে দেখলাম স্বদেশের গাছপালা, জীবজন্তু, পাখি, ফল-মূল, সুন্দরবন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনচিত্র, খনিজ শিলা, বিভিন্ন আমলের মুদ্রা ও স্থাপত্য। নজর কাড়ল হাতির দাঁতের পাটি, পালকি, কাঠের বেড়াসহ রাজ-রাণিদের বিশাল পালঙ্ক ও আসবাব পত্র। এসব দেখে মনে সাধ জাগল, আমি যদি রাজা হতাম!
এরপর গেলাম তৃতীয় তলায়। সেখানে রয়েছে নানা আকারের নানা রকমের অস্ত্রশস্ত্র, চীনামাটির শিল্পকর্ম, নানা রকমের পুতুল ও বাদ্যযন্ত্র, পোশাক পরিচ্ছদ, নকশি কাঁথাসহ আরও অনেক নিদর্শন। তবে সবচেয়ে ভালো লাগল বাংলার বিখ্যাত মসলিন কাপড়।
সমৃদ্ধ আর্ট গ্যালারি দেখলাম। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা দুর্ভিক্ষের চিত্রকর্মগুলো দেখে আমার মনে হলো ছবির চেয়ে প্রাণবন্তভাবে আর কোনো ঘটনা উপস্থাপন করা যায় না। দেখলাম ভাষা আন্দোলনের, ৭ মার্চের ভাষণের আলোকচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র দেখে আমার মনে অন্যরকম শিহরন বয়ে গেল।
এরপর জাদুঘরের চতুর্থ তলায় গেলাম। সেটা বিশ্ব সভ্যতার আর্ট গ্যালারি। গ্যালারিতে রেনেসাঁ যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক ইউরোপের বিখ্যাত শিল্পকর্ম।
এছাড়াও বিশ্ববরেণ্য কৃতি সন্তানদের প্রতিকৃতি নিয়ে সাজানো গ্যালারি থেকে মনীষীদের সম্পর্কে আমি অনেক ধারণা পেলাম।
এই জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহ আসলে একদিনে দেখা সম্ভব নয়। তাই তাড়াহুড়োয় সব কিছু ভালোভাবে দেখতে পারিনি। আর যা দেখেছি তার বর্ণনাও লিখে শেষ করার মতো নয়। আবার কোনো কাজে ঢাকা এলে অনেক সময় নিয়ে জাদুঘর ঘুরে দেখব এই আশায় বাড়ি ফিরলাম।