ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি মা মোটা একটা কর্ণফুলী কাগজে বানানো খাতায় দিনলিপি লেখেন।
তবে কখনও আমার মা তার ডায়েরিটি আমাকে পড়তে দেননি।
মা বলেন, ‘অন্যের ডায়েরি কখনও পড়তে হয় না, বাবা। আমি যখন আকাশের তারা হয়ে যাব তখন পড়িস।’
তবে কদিন আগে আমি আর লোভ সামলাতে পারিনি। সময় পেয়ে একদিন আমি মায়ের ডায়েরি পড়ে ফেলি। জানি কাজটা খুব খারাপ করেছি। এজন্য আমি অনুতপ্তও বটে।
মা যখন কলেজে পড়তেন তখন থেকেই ডায়েরি লেখেন। সেই ১৯৮৬ সালের কথা।
আমার মা স্কুল শিক্ষক। রোজ স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির সব কাজ করে প্রতিদিন রাতে মা তার ডায়েরি লেখেন।
বেগম রোকেয়া বলেছেন, মেয়েরা লিখতে বসলে ছেঁড়া চটি থেকে সুতো, কিছুই বাদ যায় না।
ঠিক সেভাবেই আমার মায়ের ডায়েরিতেও সবার কথা আছে। আমি যখন ছোট ছিলাম মাকে শুধু প্রশ্ন করে বিরক্ত করতাম। মা সে কথাও ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন। আমি, বাবা এবং দিদি অসুস্থ হয়ে পড়লে মা যেসব কথা চিন্তা করতেন আমাদের জন্য তা বুঝতে দিতেন না। কিন্ত ঠিক তার কষ্টের কথা, দুঃখের কথাও লিখে রেখেছেন।
আমার ক্লাসে প্রথম হওয়ার কথা, বৃত্তি পাওয়ার কথা সব। হ্যালোতে লিখছি, সাংবাদিকতা করছি মা তাও লিখে রেখেছেন।
মাকে আমি খুবই ভালোবাসি। মা আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক, সবচেয়ে বড় বন্ধুও।
মায়ের সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। আমরা প্রায়ই ‘শব্দার্থ বলো’ খেলা খেলি। বই থেকে কঠিন অপ্রচলিত একটা শব্দ নিয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করি, সাথে সাথে মা উত্তর দিয়ে দেন। আমি অবাক হলে মাও আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন।
আমিও ডায়েরি লিখি। প্রতিদিনের গল্প, নানা ঘটনা লিখে রাখি। যেদিন বড় হব সেদিন এই ডায়েরি খুলে হাত ছোঁয়াব এই মধুর শৈশব ও কৈশোরে।