চায়ের দেশে শিক্ষাসফর

কদিন আগেই শিক্ষাসফরে ঘুরে এলাম সিলেট থেকে। আমাদের কলেজ থেকে সবাই মিলে জাফলং, মাধবকুণ্ড, শ্রীমঙ্গলসহ শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার দেখলাম।
চায়ের দেশে শিক্ষাসফর

সিলেট যাওয়ার দিন দিন রাত নয়টার দিকে আমাদের গাড়ি ছাড়ে।  রাতের অন্ধকারে বাতাস কেটে গাড়ির ছুটে চলার শব্দ আর বন্ধুদের উল্লাস আমাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছিল। আমরা খুব মজা পাচ্ছিলাম।

এটা ছিল আমার প্রথম শিক্ষাসফর। এর আগে আমি কখনও শিক্ষা সফরে যাইনি।  তবে বেশ ভালোই লাগছিল। সবাই গান ধরলো। আমিও তাদের সাথে সুর মেলাতে চেষ্টা করলাম।

গান গাইতে গাইতে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের গাড়ি থেমে গেল। ব্যাপারটা কি হলো, ভাবতেই দেখলাম একটি ফিলিং স্টেশন। সবাই নেমে গেলাম বাস থেকে। মনে পড়ল রাতের খাবার খাওয়া হয়নি। খাবার আমাদের সঙ্গেই ছিল। কলেজ থেকে আমরা বিরিয়ানি রেঁধে নিয়েছিলাম। তারপর সবাই একসঙ্গে বিরিয়ানি খেয়ে আবার গাড়িতে উঠলাম।

আমাদের সঙ্গে থাকা একজন শিক্ষক বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমাদের কিছু নির্দেশনা দিলেন।  

আমরা খুব ভোরে সিলেট পৌঁছলাম। আমাদের গাড়ি সরাসরি গিয়ে থামল শাহ জালালের মাজারের কাছে। মাজারে প্রচুর কবুতর দেখলাম।

সেখান থেকে জাফলং পৌঁছাতে আমাদের প্রায় আটটা বেজে গেল। নেমে দেখলাম আশেপাশের দোকানপাট তখন খোলেনি।

সেখানে এক হোটেলে সবাই হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। আমাদের সঙ্গে দুজন বাবুর্চি ছিলেন। যাতে বাইরের খাবার খেতে না হয় তাই এই ব্যবস্থা। সকালের নাস্তাও বানালেন বাবুর্চিরা। সেখানে নাস্তা করে আমরা ঘুরতে বের হলাম।

সেখানে এক অন্য জীবন দেখেছি। মাটি কেটে পাথর সংগ্রহ করছে অনেক নারী পুরুষ ও শিশু। মনে হলো এদের জীবন  পাথরের মতোই কঠিন।

পাশেই স্বচ্ছ জলের পিনাইন নদী। অনেকেই নেমে সেখানে গোসল করল। এভাবেই কখন যে বিকেল হয়ে এল টের পেলাম না। এবার আমাদের হোটেলে ফেরার পালা।

বাস এবার ছুটল একটি ভালো হোটেলের সন্ধানে। স্যাররা ব্যস্ত হোটেল খুঁজতে। ততক্ষণ আমরা বাসে বসে আড্ডা দিলাম।

এরপর হোটেলে রুম পাওয়ার পর আমরা সবাই যার যার রুমে গিয়ে গোসল করলাম। তারপরেই দেখলাম খারাব তৈরি। সবাই খেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর চারটায় ঘুম ভাঙল স্যারের ডাকে।

আমাদের এরপরের গন্তব্য মাধবকুণ্ড। চোখে ঘুম ছিল। খুব কষ্টে চোখ মেলে দেখি এত ভোরে ওঠার কষ্টটা বৃথা যায়নি। চোখের সামনের পাহাড় সবুজে মোড়ানো। বাতাসে পাহাড়ের গায়ে চা গাছগুলো এমনভাবে দুলছিল মনে হচ্ছে পাহাড়টা আড়মোড়া ভাঙছে।

পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চায়ের বগান আর তার সাথে বড় বড় গাছ। এমন প্রকৃতির কাছে বারবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল।

আমার মনের কথা বুঝেই যেন গাড়িটাকে দাঁড় করানো হলো চা বাগানের পাশেই। গাড়ি থেকে নেমেই কোন কথা না বলে চলে গেলাম চা বাগানের দিকে। সাথে আমাদের স্যাররাও গেলেন। আমি যতই প্রকৃতির দিকে যাচ্ছি, ততই যেন প্রকৃতিকে আরো আপন করে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাগানের ভেতর অনেক ছবি তুললাম।

এবারে ঝর্ণা দেখার পালা। সবাই ঝর্ণা দেখতে গেলাম। গিয়েই সবাই ঝর্ণার পানিতে নেমে গেল। আমি শুধু পাড়ে দাঁড়িয়ে ঝর্ণাটা দেখতে থাকলাম।

এরপরের গন্তব্য শ্রীমঙ্গল। সবাই খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে বাসে চড়লাম। পথেই সন্ধ্যা নেমে এলো তাই আমাদের আর শ্রীমঙ্গল যাওয়া হয়নি।  

এবার ফেরার পালা। রাত আটটার দিকে আমরা বাড়ির পথে রওনা দিলাম। আসার সময় আমরা আরও মজা করলাম। হৈ হুল্লোড়ে কখন যে ময়মনসিংহ এসে পৌঁছলাম টেরই পেলাম না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com