ভবিষ্যৎ রক্ষা করবে কে

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জীবনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। তাদের দুচোখ ভরা স্বপ্ন।
ভবিষ্যৎ রক্ষা করবে কে

গোটা দেশ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। নতুনরা আসবে, ঢেলে সাজাবে সব। এত অপেক্ষা, এত আশা, এত স্বপ্নের পর যদি দেশকে তারা কিছু দিতে না পারে, তাহলে মুখ থুবড়ে কান্না ছাড়া আর কোনো উপায় নেই দেশের। পারবে কি? পারবে কি পারবে না, সেটা বড় কথা নয়। প্রশ্ন অন্য জায়গায়।

দেশ কি তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলেছে? সততা, ন্যায়, নিষ্ঠা ইত্যাদি শিখিয়েছে? আমরা জানি একটি সভ্য জাতি, সভ্য দেশ গড়ে তুলতে সততার বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা এই শিশুদের জীবনের শুরুতেই অসৎ হতে শিখিয়েছি। আমরা শিখিয়েছি ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে।

দেশে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এত দিন আমার মতো আরও অনেকের মনে হয়তো প্রশ্নের দানা বেঁধেছিল, কে করছে এসব? শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খেলছে কারা?

গত কিছু দিন আগে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ক্লাস রুমে বসে আছি। শিক্ষক পড়াচ্ছেন। হঠাৎ অন্য আরেক জন শিক্ষক হুট করে ক্লাসে ঢুকলেন। হাতে স্মার্টফোন। ভারি চিন্তিত মনে হচ্ছে উনাকে দেখে।

আমাদের যিনি পড়াচ্ছেন তাকে বললেন, “দেখেন তো প্রশ্নের উত্তরটা পারেন কি না?”

ছাত্ররা নীরব। অধীর আগ্রহে দুই শিক্ষকের কথা-বার্তা শুনছে সবাই। আমাদের শিক্ষক হেসে উত্তর বলে দিতেই তিনি কাকে যেন ফোন করে প্রশ্নের উত্তরটি বলে দিলেন। ফিসফিস করে নয়। উচ্চ কণ্ঠে! ফোনালাপে বোঝা গেল, যাকে ফোনে উত্তর বলে দিচ্ছেন, সে উনার ছেলে।

রুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তিনি বললেন, “আমার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এ+ মিস হবে না। স্যার, দোয়া করবেন আমার ছেলেটার জন্য।”

উপস্থিত আমরা অবাক হয়ে গেলাম। একটা ঠাণ্ডা শীতল স্রোত যেন আস্তে আস্তে নিচে নামতে লাগল আমার মেরুদণ্ড বেয়ে। আমি নিজের বিবেকের কাছে ভয়ঙ্কর লজ্জা পেলাম। বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে, একজন শিক্ষক হয়ে কীভাবে এরকম গর্হিত কাজ করতে পারলেন! আর পরীক্ষার হলে ছেলেটাই বা কী করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারল? পরীক্ষকের চোখকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার!!!

আমার মাথায় ঢোকে না এসব। দেশে এরকম বা এরচেয়েও জঘন্যতম কাজ হয়তো প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটে চলছে। আমরা এর খোঁজ রাখি না। কিংবা অনুসন্ধান করার প্রয়োজন বোধ করি না। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করছেন দেশের শিক্ষাবিদেরা। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও থামছে না নকল-প্রশ্ন ফাঁসের মতো মারাত্মক সব অন্যায় কাজ। এভাবে কত দিন চলবে?

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু অতি মূল্যবান সেই মেরুদণ্ড কারা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে? ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে দিচ্ছে জাতির কোমর। দিন যত যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।

সেদিন ক্লাসে আমার শিক্ষক এত ছাত্রের সামনে যে কাজটা করেছেন তা মোটেই ঠিক হয়নি। উপস্থিত ছাত্রের মনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয় এতে।

আমরা শিশু। আমাদের আর্তনাদ কেউ শোনে না। শুনবে কিনা কে জানে? তাকিয়ে দেখছে না কেউ আমাদের দিকে। আমরা কী শিখছি? কী করছি? কোন পরিবেশের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ন্যায় না অন্যায়ের পথে হেঁটে চলছি আমরা সে খোঁজ কেউ রাখে না।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। এভাবে যদি অন্যায় পরিবেশে আমরা বেড়ে উঠতে থাকি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com