মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা কলেজের প্রধান সহকারী। মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। মধ্যবিত্ত চিন্তা থেকেই তারা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে তথাকথিত চিকিৎসক, প্রকৌশলী বানাতে চাইতেন।
Published : 22 Mar 2016, 01:28 PM
তাদের চাপানো এই ঘোড়দৌড়ে মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলতাম। আবার স্বপ্নের পথে চলতাম।
ছোটবেলার কথা বলি। আমার নাচ, গান আর অভিনয় করার ইচ্ছে খুব বেশি ছিল। কিন্তু পরিবারের কেউ এটা পছন্দ করতেন না।
আমি সুযোগ পেলেই ক্যাসেটে গান চালিয়ে নিজে নিজে নাচতাম। কোথাও নাচ শেখার সুযোগ পাইনি। যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি নিজে টাকা জমিয়ে তিন দিনের নাচের একটি কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম।
সেখানে যা শিখেছিলাম সেটা নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে চর্চা করতাম। আর আমি যা পারতাম তা গ্রামের ছেলেদের শেখাতাম।
নিজের এলাকা বাদে অন্য কোন এলাকায় অনুষ্ঠান হলে সেখানে নাচতাম। এজন্য অনেকে খুব আদর করতেন। কিন্তু বাড়িতেই কাউকে জানাতে পারতাম না।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিচয় হয় গৌতম দাস বাবলু নামের এক নাট্যকারের সঙ্গে। দাদা আমাকে তার নাট্যদলে কাজ করার সুযোগ দেন। সেখানে অভিনয় শিখতাম। আমার জীবনে প্রথম মঞ্চ নাটক করি ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীতে। সেদিনের আনন্দ ছিল অসীম।
পরিবারের কেউ আমার নাটক করার পক্ষে ছিলেন না। পরিবারের বাধা উপক্ষো করে নিজের ইচ্ছেতে আমি সব কিছু করেছি।
লেখালেখির শুরুটা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে। বন্ধুদের সাথে নিয়ে বের করলাম ম্যাগাজিন। নিজের ও বন্ধুদের লেখা সংগ্রহ করে কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোকপি করে নিজেরা ম্যাগাজিন বানিয়েছি। এখানেও বাধা আসে বাড়ি থেকে।
শুনতে হয়েছে, লেখালেখি করে পেটের ভাত জুটবে না। আরও কত কি? মনে মনে ভাবতাম আমি কি আর পেটের ভাতের জন্য লিখি?
সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়ে জিলা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাই। বাড়ি থেকে শহরে এসে থাকতে হতো। সেই স্কুলের বন্ধু লাবিবের সাহায্যে ফেইসবুক দুনিয়ায় পা রাখি। মাঝে মাঝেই নিজের ভাবনা থেকে লেখা পোস্ট করতাম।
২০১৩ সালে যখন যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় আমি ফেইসবুক থেকে জেনে যোগ দেই জেলার গণজাগরণ মঞ্চে। তখন আমি পুরোদমে গণজাগরণ নিয়ে লেখালিখি করতাম। সেখান থেকেই আমার লেখা পছন্দ করেন এক পত্রিকার সম্পাদক। তিনিই আমাকে তার পত্রিকায় লেখালেখি করার সুযোগ দেন।
এসময়ও পরিবারের বাধা। গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থন করতাম বলে নানা গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। তবুও মাথা নোয়াইনি।
বর্তমানে সাংবাদিক হিসেবে লেখালেখি করি। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথেও কাজ করি। এখন আমার অনেক কাজের সাফল্য দেখে বাবা মা তেমন বাধাও দেন না।
মনের ইচ্ছেকে পূরণ করতে হলে যত বাধা আসুক না কেন নিজেকে স্বপ্নের পথেই হাঁটাতে হবে। সাফল্য আসবেই।