উড়ন্ত ঘুড়ির সাথে দিগন্তে পাড়ি দিতে, পাখিদের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়তে মন চায়। তবে এখন আর আগের মতো ঘুড়ি ওড়ানোর ফুরসৎ পাই না।
যখন ছোট ছিলাম তখন খুব করে ঘুড়ি উড়াতাম। জের ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, পতেঙ্গা ঘুড়ি, বাহারি সব ঘুড়ি উড়িয়ে অনাবিল আনন্দ পেতাম।
ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে হারিয়ে যেতাম স্বপ্ন রাজ্যে। আমার ঘুড়ি রাখতাম খুব যত্ন করে। সবুজ ক্ষেতের সরু পথ দিয়ে ঘুড়ি হাতে ছুটতাম বাতাসের পিছু পিছু।
ঘুড়িতে নাম ঠিকানা লিখে রাখতাম। ভাবতাম ঘুড়ি হারিয়ে কেউ ফিরিয়ে দিয়ে যাবে।
লাটাইয়ের সব সুতা ছেড়ে দিতাম। খুব উঁচুতে ঘুড়ি উড়াতে আমার খুবই ভালো লাগত। কিন্ত যখন বাতাসের টানে ঘুড়ি ছিঁড়ে যেত তখন খুবই খারাপ লাগত। কাটাঘুড়ির পেছন পেছন বোকার মতন দৌড়তাম। যেন আমার স্বপ্নের পেছনে ছুটছি।
ঘুড়ি হারিয়ে হতাশ মনে বাড়ি ফিরেও মায়ের বকুনি শুনতে হতো- ‘পাজি ছেলে, সারাদিন শুধু ঘুড়ি, ঘুড়ি আর ঘুড়ি। পড়ালেখা তো মোটেই করিস না!’
তবুও আমার ঘুড়ি বিলাস থামত না। খবরের কাগজ, বল্লার (এক প্রকার গাছ) আঠা আর কাঠি দিয়ে চটজলদি বানিয়ে ফেলতাম আমার স্বপ্ন-ঘুড়ি।
সেই দিনগুলো এখনও চোখে ভাসে। ভরদুপুরে খালি গায়ে একটা ছেলে দৌড়ে দিগন্তছোঁয়া সবুজ ধানক্ষেতে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। মুখে তার হাসি সেই সাথে বাড়ি ফিরে মায়ের বকা খাবার একটা আশঙ্কার ছাপও। সেই ছেলেটিই আমি।
এখনও ছোট শিশুদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখে ফিরে যাই ছোট বেলায়। মনে হয় সব সুতা ছেড়ে দিয়ে ঘুড়িকে পাঠিয়ে দেই সুদূর অজানায়।