চাঁদের পাহাড়: হীরার খোঁজে বাঙালি তরুণের দুর্গম অভিযান

“সে ও তার বন্ধু জিম কার্টার আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার খনির সন্ধান পায়।”
চাঁদের পাহাড়: হীরার খোঁজে বাঙালি তরুণের দুর্গম অভিযান

বই পড়তে কার না ভালো লাগে? আর সেই বইয়ের প্রতি পাতায় পাতায় যদি থাকে  প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা অথবা গহীন অরণ্যে ঘুরে বেড়ানো আর অভিযানের গল্প তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই।

কিছু দিন আগে আমি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী কিশোর উপন্যাস 'চাঁদের পাহাড়' পড়েছি।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই পড়ে মনে হলো তার লেখালেগুলো এমন ভঙ্গিতে লেখা, পড়তে গেলেই যেন বই পড়ার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

'চাঁদের পাহাড়' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিশু কিশোরদের জন্য লেখা প্রথম উপন্যাস। এটি ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত চন্দ্র সরকার সম্পাদিত ছোটদের পত্রিকা মৌচাকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পায়। পরে এটি উপন্যাস আকারে একত্রে প্রকাশিত হয়।

'চাঁদের পাহাড়' উপন্যাসটি আমি পড়েছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিশু কিশোর উপযোগী রচনা সংকলনের বই 'কিশোর সমগ্র' থেকে। এই বইটিতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিশু কিশোরদের জন্য লেখা বেশির ভাগ রচনা স্থান পেয়েছে।

'চাঁদের পাহাড়' উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর। সে একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে। তবে সাধারণ কোনো ছেলে শঙ্কর নয়। একেবারে ডানপিটে ছেলে যে কি-না স্কুলের খেলাধুলায় বরাবর প্রথম হয়েছে সব সময়। সাঁতার, গাছে চড়া, ঘোড়ায় চড়া ও বক্সিংয়ে সিদ্ধহস্ত শঙ্কর।

এফ. এ পাশের পর শঙ্কর একটি পাটের কলে চাকরি নেয়। একদিকে পরিবারের অভাব অনটন, অন্যদিকে অসুস্থ বাবা শঙ্করকে চিন্তাগ্রস্ত করে রাখে।

শঙ্কর রোমাঞ্চ প্রিয় মানুষ। পাটকলের চাকরি কি তার ভালো লাগে? তাই তো একদিন সে দুর্গম আফ্রিকায় পাড়ি জমায় শঙ্কর। সেখানে উগান্ডার রেলওয়েতে চাকরি নেয় সে।

সে রেলওয়ের যে স্টেশনে চাকরি পায়, সে গ্রামে রয়েছে মানুষখেকো সিংহ। সিংহের সঙ্গে তার লড়াই হয়। ভয়ংকর সাপ ব্ল্যাক মাম্বার সঙ্গেও লড়তে হয় তাকে।

কিন্তু এতেও কি শঙ্করের অভিযানের নেশা থামে? শঙ্কর চায় দূর্গম অভিযাত্রীর জীবন। সে চায় ভয়ংকর রকমের অ্যাডভেঞ্চার।

ভূগোলের উপর শঙ্কেরর অগাধ জ্ঞান রয়েছে শঙ্করের। ছাত্র জীবনে তার বাতিকই ছিল রাজ্যের ম্যাপ ঘাটাঘাটি করা, ভূগোলের বড় বড় বই পড়া ও ভূগোলের অংক কষা। এসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অভিযানে যেতে চায় শঙ্কর।

পর্তুগীজ স্বর্ণ সন্ধানী ডিয়াগো আলভারেজের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। ডিয়াগো আলভারেজ একজন অভিযাত্রী। সে ও তার বন্ধু জিম কার্টার আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার খনির সন্ধান পায়। কিন্তু সে অভিযানে ভয়ংকর জন্তু বুনিপের হাতে মারা যায় তার বন্ধু জিম কার্টার। আর আলভারেজ ভয়ে পিছু হটে।

শঙ্কর আলভারেজের কাছে হীরার খনি অভিযানের গল্প শুনে, সে রেলওয়ের চাকরি ছেড়ে দেয়। আলভারেজের সঙ্গে হীরার খনির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।

সে অভিযানের পদে পদে বিপদ। প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় জঙ্গলের ভয়ংকর জন্তুর সঙ্গে। সেই ভয়ংকর জন্তু বুনিপের আক্রমণে আলভারেজ মারা গেলে একা হয়ে পড়ে শঙ্কর।

শঙ্কর নিজেকে হারিয়ে ফেলে বুনিপের গুহায়। পথ হারিয়ে ভয়ংকর রকমের বিপদে পড়ে সে। অবশেষে গুহা থেকে সে কিছু পাথর সঙ্গে নিয়ে বের হয়।

সে এক ইতালীয় অভিযাত্রীক আত্মিলিও গাত্তির নোট থেকে জানতে পারে, এই পাথরগুলোই কাঁচা হীরা। আর সে গুহায় পথ হারিয়েছিল, সেটিই ছিল হীরার খনি। এই খনির জন্যেই সে অভিযানে বের হয়েছিল। এই হীরার খনির জন্যেই জীবন দেয় জিম ও আলভারেজ।

কিন্তু এতে করে আর কোনো লাভ হলো না। ততক্ষণে শঙ্কর আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে কালাহারি মরুভূমিতে। এরপর কি শঙ্কর সেই মরুভূমিতেই প্রাণ হারায়? নাকি বেঁচে ফিরতে পারে? কী হয় শঙ্করের জীবনে? এসব কিছুই জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে চাঁদের পাহাড়!

'চাঁদের পাহাড়'  উপন্যাসে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে আফ্রিকার গহীন জঙ্গলের বর্ণনা। উপন্যাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা ও রহস্যময়তা পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখে। জঙ্গলের বিভিন্ন হিংস্র জন্তু থেকে শঙ্করের বাঁচার কৌশল উত্তেজনা আরো দ্বিগুণ করে দেয়। পঞ্চম খণ্ড থেকে উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল যেখানে ডিয়েগো আলভারেজ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং তারা হীরার খনির সন্ধানে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে এবং পথে তারা বিভিন্ন হিংস্র পশুদের সম্মুখীন হয়।

চাঁদের পাহাড় উপন্যাসটি নিয়ে ভারতে পশ্চিমবঙ্গে 'চাঁদের পাহাড়' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: খুলনা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com