‘দাদির হাতের রান্না আমার খুবই প্রিয় ছিল। তিনি সবাইকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। এই জন্য তিনি সবাইকে খাওয়ানোর পর নিজে খেতে বসতেন।’
Published : 09 Jun 2024, 03:49 PM
আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু স্মৃতি থাকে যা আমাদের সব সময় তাড়িত করে। যেমন ধরা যাক, দাদা-দাদি বা নানা নানির সঙ্গে কাটানো কোনো স্মৃতি। সময়ের পরিক্রমায় তারা আমাদের থেকে হারিয়ে গেলেও, তাদের স্মৃতি আমাদের কাছে বেঁচে থাকে যুগ যুগ ধরে।
তাদের শাড়ি বা চাদর মুড়িয়ে আমাদের কাছে রেখে যান তাদের ঘ্রাণ, ভালোবাসা আর হাজারো স্মৃতি।দাদি ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি তাকে ‘সোনা’ নামে ডাকতাম।
স্কুল থেকে ফেরার পর আমার স্কুলের গল্প শোনার একমাত্র মানুষ ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে আমি জীবনে সব চেয়ে বেশি ঝগড়া করেছি। আবার তাকেই জীবনের গভীর সত্য, ভালো ও খারাপ লাগা, দুঃখ-কষ্ট সব কিছুর কথা বলেছি।
দাদির হাতের রান্না আমার খুবই প্রিয় ছিল। তিনি সবাইকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। এই জন্য তিনি সবাইকে খাওয়ানোর পর নিজে খেতে বসতেন।
দাদি আমাকে রান্না শেখাতে চেয়েছিলেন। কথা ছিল, আমি রান্না শিখে তাকে রান্না করে খাওয়াবো।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আইসিইউ ও কেবিনে কিছু দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি বাসায় ফেরেন। তিনি তখন পুরোপুরি সুস্থ হননি।
১৬ ডিসেম্বর তিনি কোমায় চলে যান। তাকে আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয়। আমার মনে আছে আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, “বাবা, দাদি কবে বাসায় ফিরবে?”
বাবা বলেছিলেন, “৩১ ডিসেম্বর। আমরা তোমার দাদিকে নিয়ে নতুন বছর শুরু করব।”
এই দিনেই দাদি বাসায় ফেরেন। তবে তিনি তখন আর বেঁচে নেই।
দাদি বেঁচে থাকতে তাকে কখনো বলতে পারিনি যে, আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।
এখন কেউ আর আমার হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলে না “এই নে, এটা রাখ। কাউকে বলিস না।” বিদ্যুৎ চলে গেলে তার মতো কেউ আর আমাকে বাতাস করে না। আমার ছোট ছোট জিনিসগুলো এখন নিজেকেই যত্ন করে রাখতে হয়।
৩১ ডিসেম্বর দিনটি অনেকের জন্য উৎসবের হলেও আমার জন্য কষ্টের। কারণ, এই দিন আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।