শিশুটি কি বিনোদনের খোরাক?

শিশুটিকে নিয়ে এই তামাশা বন্ধ হোক।
শিশুটি কি বিনোদনের খোরাক?

প্রতিনিধিত্বশীল ছবি

কিছুদিন ধরে একটি শিশুর কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সে একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। কিছু প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে না পারায় হাস্যরসের খোরাকে পরিণত হয় ছোট্ট শিশুটি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পাঠশালায় শিশুটিকে কিছু সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে সে ভুল উত্তর দিচ্ছে। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনোদনের বিষয় হয়ে ওঠে।

একজন ছাত্র যদি কোনো প্রশ্নের ভুল উত্তর দেয় তাহলে তা অডিও বা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িযে দেওয়ার কোনো অধিকার কারো আছে কিনা এটা আমার প্রথম প্রশ্ন। আর যদি কোনো উদ্দেশ্যে তাকে দিয়ে এটা করানো হয় তাহলে সেটি আইন অনুযায়ী সঠিক কিনা সেটি আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন।

আমিও একজন শিশু। আমি বেশ কয়েকটি শিশু সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করি। ফলে পথশিশু থেকে শুরু করে সমাজের নানা স্তরে থাকা শিশুর সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের সঙ্গে মতের আদান-প্রদানও হয়।

আমি দেখেছি কোনো শিশুই হাসির পাত্র হতে চায় না। তাকে নিয়ে মজা করা হোক, তামাশা করা হোক, তাকে অবজ্ঞা করা হোক এটা সে কখনো মন থেকে মেনে নেয় না। যেমনটা একজন শিশু হিসেবে আমিও মানি না। 

এই ঘটনার পর আমি আমার বাবা-মা থেকে শুরু করে আরও কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। এই ভিডিও যত ভাইরালই হোক না কেন, তারা কেউই ওই শিশুটির জায়গায় তাদের সন্তানকে দেখতে চায় না। তাহলে এই শিশুটি কেন বিনোদনের হাতিয়ার হবে?

শিশুরা নিজেদের অধিকার, সুন্দরভাবে বড় হওয়ার পরিবেশ, তাদের ভালো লাগা, মন্দলাগা নিয়ে কিছু বলতে পারে না বলেই তো বড়দের তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু তা না করে শিশুর ভুলকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিয়ে একটি শিশুর সহজ শৈশব আমরা নষ্ট করে দিচ্ছি না-তো?

স্কুলে, মাঠে, ঘাটে, পথে, প্রান্তরে শিশুটিকে দেখে তার ভুল উত্তরগুলো নিয়ে কেউ তাকে আক্রমণ করবে না কে এই নিশ্চয়তা দিবে?

আন্তর্জাতিক শিশু সনদের তৃতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় বলা হয়েছে যে, “শিশু বিষয়ে যে কোনো ধরনের কার্যক্রমে শিশুর স্বার্থই হবে প্রথম ও প্রধান বিবেচনার বিষয়৷”

কিন্তু এই ভিডিওতে শিশুটির কোনো স্বার্থ কি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে? নাকি অন্য কেউ নিজ স্বার্থে শিশুটিকে ব্যবহার করছে? আমি চাই শিশুটিকে নিয়ে এই তামাশা বন্ধ হোক। তার ভুলগুলো শুধরে দেয়া হোক। তাকে সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা হোক।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com