গ্রামের মানুষকে শাসন করতে গিয়ে মজিদ নিজেই ভয়ানক রকমের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে।
Published : 16 Mar 2025, 05:52 PM
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখা ‘লালসালু’ উপন্যাসটি আমার প্রথম নবম শ্রেণিতে পড়া হয়। পরে কলেজে ভর্তির পর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকায় আবারও পড়ি। লালসালু উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মূলত এক সামাজিক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের জন্ম এমন এক অঞ্চলে যেখানে ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি’। ভাগ্য ফেরানোর আশায় সে মহব্বতপুর গ্রামে আসে এবং এক পরিত্যক্ত কবরকে ‘মোদাচ্ছের পীরের মাজার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ধর্মভীরু ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের শাসন করার জন্য এই মাজারকে কেন্দ্র করেই সে তার আধিপত্য বিস্তার করে।
গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি খালেক ব্যাপারী মজিদের প্রধান সহযোগী। প্রচুর অর্থ-বিত্ত থাকা সত্ত্বেও সে মজিদের ক্ষমতাকে কখনো চ্যালেঞ্জ করে না। মজিদ জানে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যদি চলতে থাকে তাহলে কুসংস্কার টিকবে না। আর সে তার ক্ষমতা হারাবে। তাই সে মানুষের আনন্দ-বিনোদন, স্বাধীন চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এমনকি গ্রামের আক্কাস নামের একজন যুবক যখন শিক্ষার আলো ছড়াতে স্কুল গড়তে চায় তখন মজিদ তা বন্ধ করে দেয়।
উপন্যাসে মজিদের দুই স্ত্রী রহিমা ও জমিলার চরিত্রও গুরুত্বপূর্ণ। রহিমা শান্ত, ধর্মভীরু ও মজিদকে ভয় পায়। তবে জমিলার প্রতি মজিদের কঠোর আচরণ রহিমাকে ভিন্ন এক ব্যক্তিত্বে প্রকাশ করে। জমিলাকে সে বড় বোনের মতো আগলে রাখে।
গ্রামের মানুষকে শাসন করতে গিয়ে মজিদ নিজেই ভয়ানক রকমের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে সে নিজেকে সব মিথ্যার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার কথা ভাবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেকে যায় শোষক হিসেবেই।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই উপন্যাসে ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি ও ধর্মব্যবসার ভয়ানক দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের সহজ-সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে কীভাবে কুচক্রীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করে, লালসালু তারই বাস্তব প্রতিচিত্র।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।