আগামী দিনের বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুষণ, দুর্নীতি থেকে বাঁচাতে ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে শিশু অধিকার রক্ষায় এখন থেকেই সোচ্চার হওয়া উচিত।কারণ এই শিশুই একদিন দেশের হাল ধরবে।
কাগজে কলমে শিশু অধিকার বা শিশুদের সুরক্ষায় আইন বা নীতি থাকলেও অগনিত ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। ফলে খর্ব হয় শিশু অধিকার। অথচ শিশুরা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠলে, তারা সুনাগরিক হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে ২০২০ সালেও আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রতি হাজারে ২৯ জন। ২০১৯ সালের হিসাবে আনুযায়ী চার দশমিক তিন মিলিয়ন শিশু এখনো স্কুলে যায় না।
ইউনিসেফের তথ্য মতে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন শিশুর শিক্ষা ও ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এদিকে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা না কমে তা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটেস্টিকস বা বিবিএস এর সার্ভে অনুযায়ী ২০১৩ সালে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ছিল ১৭ লক্ষ, ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছিল ৩৪ লক্ষ ৫০ হাজারে। পথ শিশুর সঠিক সংখ্যাও অজানা। আবার বাল্যবিবাহের হারে পৃথিবীর শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান।
আন্তর্জাতিক শিশু সনদের ধারা ১৯ অনুযায়ী সকল শিশুদের সকল প্রকার সামাজিক সুবিধা পাবার কথা কিন্তু দেখা যায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি বিরাট সংখ্যার শিশু এই সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত, শিকার হচ্ছে নানাবিধ নির্যাতনের।
অপরদিকে আমাদের দেশে বাতাস ক্রমশই শিশুদের জন্য হয়ে উঠছে বিপদজনক। বাংলাদেশের বাতাসে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বায়ুবাহিত কণার পরিমান ৭৬ দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম যা বিশ্ব স্বাস্ব্য সংস্থার মতে সহনীয় মাত্রার ১৫ গুণ বেশি ।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী শব্দ দূষণে সারা পৃথিবীতে ঢাকার অবস্থান সবার প্রথম। তাছাড়া, বাড়ছে পানি দূষণ, মাটি দূষণ। কমছে বনাঞ্চল। আর এই সব কিছু বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠায়।
সম্প্রতি ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে দেখতে পাই কত শিশু শুয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। তাদের কত জন যে অনাহারে, অর্ধাহারে, কত জন যে ভুগছে অসুখে-বিসুখে, কত জন যে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে তার হিসেবে কে রাখে।
তাই শিশুর জন্য চাই সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। শিশু অধিকার রক্ষায় চাই অগ্রাধিকার।