শুধুমাত্র ধর্মের দোহায় দিয়ে হওয়া বাল্যবিয়ের সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয়। তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে ধর্মীয় নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মীয় নেতাদের অনেক বিশ্বাস করে এবং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। এই সামাজিক ব্যাধি রোধে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ দরকার বলে আমি মনে করি। তাদের মাধ্যমে একদম সকল স্তরের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
সিরাজগঞ্জ গীতা শিক্ষা বিদ্যালয়ের পরিচালক রতন চক্রবর্তীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাল্যবিয়ের ব্যাপারে তার ধর্মে কী বলে?
তিনি জানালেন, বাল্যবিবাহ ধর্মের কোনো অঙ্গ নয়, এটি এক ধরনের অত্যাচার।
“আমাদের সনাতন ধর্মে বিয়ে হয় শাস্ত্র অনুযায়ী, মেয়েদের ঋতুস্রাব হওয়ার পর। ১৮ বছর না হলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শাস্ত্রে নেই।"
বাল্যবিয়ে বন্ধে আপনার উদ্যোগ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন ছোট কোনো মেয়েকে পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দেওয়া হয় তখন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরি।
“বিভিন্ন মন্দিরে যারা বিয়ে করান তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে যে অল্প বয়সী মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে আমাদের জানাবেন এবং বিয়ে করানো থেকে বিরত থাকবেন।"
প্রায় একই কথা জানা গেল ইসলাম ধর্মের ক্ষে্ত্রেও। এ ব্যাপারে কথা হয় সিরাজগঞ্জের হযরত ফাতিমা (রা.) হাফিজিয়া কওমীয়া মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ক্বারী মাওলানা মো. এনামুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলছিলেন, "শরীয়তের দৃষ্টিতে বাল্যবিবাহ একটি জঘন্যতম অপরাধ। একটি নাবালিকা শিশুর জীবন নষ্ট করে দেয় বিয়ে।"
মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, ওলামা একরাম তারাই আসলে বাল্যবিবাহটা বন্ধ করতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জুম্মার দিনে যখন আমরা ইমামেরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা করে থাকি তখন বাল্যবিবাহ সম্পর্কে যদি অভিভাবকদের সতর্ক করতে পারি তাহলে এটা কাজে দেবে।"
তিনি যোগ করেন, "হাদিসে বলা হয়েছে যদি কোনো মেয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো অভিভাবক বিয়ে দেন, সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। মেয়েরও একটা পছন্দ আছে। মেয়ে যদি বিয়েতে অনুমতি না দেয় তাহলে মেয়েকে আমরা জোর করে বিয়ে দিতে পারি না।
“বাল্যবিবাহ যদি আমাদের আশেপাশে হয়, আমাদের চোখে পড়ে তাহলে আমরা আগে অভিভাবকদের কে বোঝাবো। তারা না বুঝতে চাইলে আইনের আশ্রয় নেব।"