২০২৩ সালে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। সে বছর ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।
Published : 30 Dec 2024, 04:39 PM
ডেঙ্গু জ্বর এখন আর মৌসুমভিত্তিক নয়, বরং বছরজুড়েই এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর এমন লাগামহীন সংক্রমণের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের দায় রয়েছে।
দেশে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় হাসপাতাল বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে পরিচিত বর্ষাকাল পার হয়ে গেলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক শিশু হাসপাতালটির বিশেষ কর্ণারে চিকিৎসা নিচ্ছে। যেখানে ভর্তি রোগীরা শুধু ঢাকা থেকে নয়, তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে।
সেখানে রিংকি আক্তার নামের এক নারী তার ১০ মাস বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন বলে জানান।
মাদারীপুর থেকে আসা আবদুল জলিল তার এক বছর বয়সী মেয়ে জাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।
তিনি হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমার মেয়ের গায়ে অনেক জ্বর আসার পরে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ঢাকা নিয়ে আসতে বলে। আমি এখানে নিয়ে আসলাম।’
একইভাবে হাজারীবাগের নুরজাহান তার ছেলে আফনানকে ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
তিনি হ্যালোকে বলেন, ‘যদিও এখন ডেঙ্গুর মৌসুম না তবুও আমার ছেলে আক্রান্ত হয়েছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ।’
ডেঙ্গু কর্ণারে দায়িত্বরত আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) আনিফা রহমানের সঙ্গে কথা বলে হ্যালোর প্রতিবেদক।
এই চিকিৎসক বলছিলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর আমাদের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আমি মনে করি সচেতনতার কারণেই এবছর শিশু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের ভর্তি ও মৃত্যুর হিসাব রাখছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। সে বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এস এম খালিদ মাহমুদ শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়।
এই চিকিৎসক হ্যালোকে বলেন, “ডেঙ্গুর মৌসুম বলতে কিছু নাই এখন। বলতে পারেন বছরের একটা সময় প্রকোপ বেশি থাকে। ডেঙ্গু এখন সারা বছরের অসুখ। এ থেকে বাঁচতে পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্যান্য জেলার তুলনায় সাধারণত ঢাকায় বেশি দেখা যায়। বিশ্ব ব্যাংক ২০২১ সালে একটি গবেষণা ফল তুলে ধরে বলে, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের দায় রয়েছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের বৃদ্ধি এবং আর্দ্রতার পরিবর্তন ডেঙ্গুর বিস্তার ত্বরান্বিত করছে।
গেল বছর জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, জলবায়ু পরিবর্তন ডেঙ্গুর মত মশাবাহিত রোগের বিস্তার বাড়িয়ে তুলছে, যা বড়দের পাশাপাশি সরাসরি শিশুদের জীবনেও প্রভাব ফেলছে।
ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি হ্যালোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রভাব আছে, এটা একটা কারণ। বাংলাদেশে এখন সারা বছরই হয় কারণ আমাদের তাপমাত্রা সারা বছরই এইডিস মশার জন্য উপযোগী। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন অপরদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে এখন সারা বছরই এইডিস মশা হয়। এরজন্য ডেঙ্গু হওয়াটাও স্বাভাবিক।’
এই কীটতত্ত্ববিদ বলছেন, এইডিস মশা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা নিতে হবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।