হিস্ট্রি ডটকম সাইট সূত্রে অনুমান করা হয়, দ্বাদশ শতাব্দীতে একদল মানুষ সৌভাগ্যের খোঁজে মধ্য আমেরিকা থেকে এসে পাহাড়ের কুজকো উপত্যকায় বসবাস আরম্ভ করে। তারা ধীরে ধীরে সেই এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে এবং মানুষদের বিতাড়িত করে। তাদের মধ্যে পরাক্রমশালী ‘তামাক’ নামের এক যোদ্ধা নিজেকে ‘ভিরাকোচা ইন্কা’ আর তার রাজত্বকে ‘ইন্কা’ রাজ্য নাম দেন।
স্কলারদের মতে ১৪৫০ সালের দিকে ইন্কাতে রাজা পাচাচুটেক ইন্কার শাসনামলেই সৃষ্টি হয় মাচুপিচু সভ্যতা। এছাড়াও একে কখনও কখনও মেঘের শহর বা সুর্যনগরীও বলা হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতাটি ছিল সুরক্ষিত। মাচু পিচুর সেই পাহাড়ের একপাশ এতই ঢালু ছিল যে, এটি উরুবাম্বা নদীর পাদদেশ থেকে প্রায় ৬০০ মিটার খাড়া ছিল।
মাচু পিচু শহর গোটা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত সড়ক পথে। এখানকার জনসংখ্যা তিনশ থেকে এক হাজার নাগরিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল অভিজাত ধার্মিক, রাজা পাচুটেকের বংশধর এবং ইয়ানাকোনাস নামের রাজ্য থেকে আসা শিল্পীরা।
মাচু পিচুর অন্তর্গত উপত্যকাগুলোতে প্রচুর ফসল ফলত। তার সাথে ওখানকার নাগরিকরা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতিও আয়ত্ত করে ফেলেছিল। যে কারণে তাদের বিলুপ্তির আশংকাও ছিল শুন্যের কোঠায়। তবে রাজা পাচাচুটের মৃত্যুর পরে মাচু পিচু তার উল্লেখযোগ্যতা হারায়।
আতাহুয়ালপা ও হুয়াসারের মধ্যে সংঘঠিত গৃহযুদ্ধের সময় শহুরে জনগণেরা মিটমাস শহরের অন্তর্ভুক্ত হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা সকলে নিজ নিজ জন্মভুমিতে ফিরে যায়। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইন্কা থেকে সকলকে ভিলকাবাম্বায় নির্বাসিত করা হয়। এবং এর ফলেই পরিত্যক্ত হয় মাচু পিচু সভ্যতাটি।
পেরুর অন্তর্গত এই আকর্ষণীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরকে ২০০৭ সালে ‘নতুন সপ্ত আশ্চর্যের’ একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
প্রতিবছর বহু পর্যটক মাচু পিচু সভ্যতাকে জানার জন্যে পাড়ি জমায় সেখানে। বর্তমানে পর্যটনের সুবিধার্থে পেরু সরকার এই অঞ্চলসহ আশেপাশের শহরগুলোর উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে।
জানা যায় যে, মাচু পিচুর পথের ধুলোতেও সোনার গুঁড়া লেগে থাকত।