কোমল পানীয়ের ইতিকথা

ফাস্টফুডের সাথে বা ভুরিভোজনের পর এক গ্লাস ঠাণ্ডা কোমল পানীয় না হলে যেন চলেই না।
কোমল পানীয়ের ইতিকথা

সাধারণত অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়গুলোকে কোমল পানীয় বলে। অ্যালকোহলমুক্ত হলেও চা, কফি, ফলের রসকে আবার কোমল পানীয়ের দলে ফেলা হয় না।

কোমল পানীয় মূলত কার্বনেটেড ওয়াটার এবং চিনি বা অন্য মিষ্টিকারক পদার্থের মিশ্রণ। এর সাথে বিভিন্ন ফ্লেভার, রং, প্রিজারভেটিভ যুক্ত করা হয়।

সাধারণভাবে কোমল পানীয় নামে পরিচিত হলেও এর আবার বিভিন্ন শ্রেণিভাগ আছে। যেমন, কার্বনেটেড বেভারেজ, ফিজি ড্রিংক, কোল্ড ড্রিংক, সোডা ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ডের এক জরিপে দেখা যায় তাদের দেশে 'সোডা' নামটিই কোমল পানীয়ের ক্ষেত্রে বেশি প্রচলিত। এছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে ফিজি ড্রিংক এবং ভারতে কোল্ড  ড্রিংক নামেই বেশি পরিচিত এই পানীয়।

ফলের স্বাদের পানীয়গুলোর বিভিন্ন রকম পরিবর্তন থেকেই কোমল পানীয়ের উৎপত্তি। একসময় যুক্তরাজ্যে ‘ওয়াটার ইম্পেরিয়াল’ নামের  এক পানীয় প্রচুর পান করা হতো। এটি ছিল লেবুর স্বাদের মিষ্টি পানীয় যার সাথে ক্রিম অফ টারটার মেশানো হতো।

এছাড়া পশ্চিমা দেশে পানি, লেবুর রস এবং মধু মিশিয়েও এক ধরণের পানীয় তৈরি করা হতো। এগুলো থেকেই বর্তমান কোমল পানীয়ের জন্ম।

এন্সাক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা থেকে জানা যায়, ১৬৭৬ সালে প্যারিসের কম্প্যাগনি দেস লিমোনাডিয়ার্স কোমল পানীয়ের একচেটিয়া ব্যবসা করতো। বিক্রেতারা পিঠে করে লেবুর শরবতের বয়ে নিয়ে তৃষ্ণার্ত প্যারীসবাসীকে কাপের করে পরিবেশন করত এই পানীয়।

১৮ শতকে এসে বিজ্ঞানীরা কার্বনেটেড ওয়াটার তৈরিতে বেশ এগিয়ে গেলেন। ১৭৬৭ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জোসেফ প্রিস্টলি কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশিয়ে কার্বনেটেড ওয়াটার তৈরির একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।  

পরবর্তীতে আরেক ইংরেজ জন মারভিন নুথ প্রিস্টলির এই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করে তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেচতে শুরু করেন। সুইডিশ রসায়নবিদ টরবন বার্গম্যান চক থেকে সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করে কার্বনেটেড ওয়াটার প্রস্তুতের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। থমাস হেনরি নামের এক ব্যক্তি প্রথম ম্যানচেস্টারে সাধারণ মানুষের কাছে কার্বনেটেড ওয়াটার বেচতে শুরু করেন ১৭৭০ এর দশকে। ১৭৮৩ সালে জোহান জ্যাকব সুইপ, জেনেভায় কার্বনেটেড ওয়াটার বিক্রির জন্য  সুইপস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৭৯২ সালে তার এই ব্যবসা লন্ডনে স্থানান্তর করেন। তার পানীয় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

চিনিযুক্ত কোমল পানীয় নিয়মিত পান করলে মোটা হওয়া (ওবেসিটি) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, দাঁতের গর্তজনিত ক্ষত এবং অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এসব কারণে কোমল পানীয় পান করলেও তা যেন অতিরিক্ত পান করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com