যে জীবন হাজার বছরের

৩৭ বছরের জীবনেই বাংলা সাহিত্য আর চলচ্চিত্রে অবদান রেখেছেন জহির রায়হান। আর তারপরেই ১৯৭২-এ হারিয়ে যান। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯ অগাস্ট এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ঔপন্যাসিকের ৮০তম জন্মদিন।

১৯৩৫ সালের ১৯ অগাস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্ম নেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণ আর উপন্যাস লেখার পাশাপাশি জহির রায়হান সাংবাদিকতা করতেন। সাংবাদিক জীবনে যুগের আলো, খাপছাড়া, যান্ত্রিক ও সিনেমা পত্রিকায় কাজ করেছেন। প্রবাহ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন জহির রায়হান। ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথেও নেমে পড়েন। ১৪৪ ধারা ভাঙার অভিযোগে সেদিন কারাবরণ করতে হয় তাকে। ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানেও যোগ দেন তিনি।   

১৯৫৫ সালে নতুন এক পরিচয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন। বের করেন প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’।  

চলচ্চিত্রের সাথে নিজেকে জড়ান ১৯৫৬ সালে। ১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন এ বুদ্ধিজীবী। পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মিত হয় তার হাত ধরেই। ১৯৬৩ সালে 'কাঁচের দেয়াল' চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি নিগার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি নির্মাণ করেন জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রটি।  

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। আলোড়ন সৃষ্টি করা ২০ মিনিটের এ প্রামাণ্য চিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছিল হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা আর শরণার্থীদের অবস্থা।

ঔপন্যাসিক হিসেবেও বেশ খ্যাতি রয়েছে জহির রায়হানের। তার প্রথম উপন্যাস হলো শেষ বিকেলের মেয়ে। ১৯৬৪ সালে তিনি রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’। এ উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার পান। এছাড়া তৃষ্ণা, বরফ গলা নদী, আর কত দিন, একুশে ফেব্রুয়ারি তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।  

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে হানাদার বাহিনীর দোসর আল-বদর জহির রায়হানের বড় ভাই বিখ্যাত লেখক শহিদুল্লাহ কায়সারকে ধরে নিয়ে যায়। বড় ভাইকে খুঁজতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঘর থেকে বের হয়ে যান জহির রায়হান। তারপর আর তিনি ফিরে আসেননি, এখনো মেলেনি কোনো হদিস।

‘রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরনো সে রাত’। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের এই কথাটির মতো বাংলা সাহিত্যে তার অভাবও বেড়েই চলেছে, এ অভাব পূরণ হওয়ার নয়।
                                              

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com