'মুক্তি চাই, কীভাবে জানি না'

আমাদের দেশের অভিভাবকেরা মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। ছেলের পাশাপাশি তারা মেয়েকেও বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। এটা অনেক আগের কথা। তবে এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

দিন যতই যাচ্ছে আমরা উন্নত হচ্ছি। এর সঙ্গে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। লেখাপড়া, চাকরি এমনকি বেঁচে থাকাও আজ আমাদের প্রতিযোগিতার অংশ। ছেলে মেয়ে কাউকে আর আলাদা করে দেখার উপায় নেই।

মা বাবাও ছুটছেন সন্তান কীভাবে লেখাপড়ায় ভালো করবে, কীভাবে ভালো চাকরি করবে, কিসে তার ক্যারিয়ার ভালো হবে তার পেছনে।

কিন্তু অনেক অভিভাবকই ভাবেন না তার মেয়ে কোনো ভোগান্তিতে পড়েছে কি না।

আমাদের দেশে মেয়েরা রাস্তায় বের হলেই নানা রকম হয়রানির শিকার হয়। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে না পেরে আত্মহত্যা, প্রেমে রাজি না হওয়ায় এসিড নিক্ষেপ, খুন, ধর্ষণ শেষে খুনের খবর।

এসব ঘটনার শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাই হয়। শহরের বাবা-মা এসব ব্যাপারে সচেতন হলেও গ্রামের অভিভাবকরা এতটা সচেতন নন। আমার মনে হয় শুধুমাত্র অভিভাবকের সচেতনতা এটা কমাতে পারে অনেকাংশে।

তা না করে তারা বলেন, মেয়েকে কেউ রাস্তায় বিরক্ত করেছে তো দাও বিয়ে দিয়ে। বিয়ের পর পড়বে। কিন্তু বিয়ের পর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া একটা মেয়ের জন্য কষ্টকর। অথচ এই মেয়ে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখতেন।

কোন কোন বাবা মা শুধু লেখাপড়ার ও ভাল রেজাল্টের ওপর চাপ দেন কিন্তু সন্তানের চাওয়া না চাওয়া, নিরাপত্তা নিয়ে ততটা বিচলিত হন না।

এসব নিয়ে কয়েক জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া বৃষ্টি সঙ্গে কথা বলে আমি শঙ্কিত হই। রোজ স্কুলে যাওয়ার পথে ওকে এক বখাটে ছেলে বিরক্ত করে। ও ছেলেটাকে চেনে না। স্যারকে বিচার দেবে বললে এসিড ছুঁড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

কীভাবে এখান থেকে মুক্তি মিলবে জানে না আয়েশা নামের শিক্ষার্থী। ও শুধু এর থেকে মুক্তি চায়। নানান হুমকির জন্য বাড়িতে বলতেও সাহস হয় না ওর।

কলেজ পড়ুয়া ফারহানার মত, এভাবে চলতে থাকলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেয়ে বলে, ও প্রতিদিন তার স্যারের ছেলের কাছে উত্ত্যক্তের শিকার হয়। কিন্তু কিছুই বলার সাহস হয় না। তবে এতদিন ধরে সহ্য করতে করতে ও বিরক্ত।

স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর অভিভাবকের সচেতনতার ওপর জোর দেন। 

মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ছেলে সহপাঠীরও এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত বলে মনে করেন এক স্কুল পড়ুয়া ছেলে।

এক অভিভাবকের মতে, ছেলেমেয়ের ভালো বা খারাপ লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। যদিও অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনায় সহজ হতে পারেন না। কিন্তু এটা মোটেও উচিত নয়।

স্কুলে যাওয়া আসার পথে যে অনিরাপত্তা তা থেকে মুক্তি চায় প্রতিটি শিক্ষার্থী। সেটা যেভাবেই হোক।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com