সৃজনশীলে হচ্ছে না কেউ চিন্তাশীল

শিক্ষা নিয়ে অদ্ভুত সব ধারণা সমাজে চালু আছে। যেমন শিক্ষকরা আমাদেরকে গল্পের বই পড়তে উৎসাহ দেন না। তারা মনে করেন এসব পড়া সময় নষ্ট।

আমাদের বাবা-মাও এসব বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা কিছু শিখেছি তাতে বিভিন্ন গল্পেরসহ বিভিন্ন বইয়ের অবদানই বেশি।মানুষের সাথে আচরণ বা আদব-কায়দা বলুন আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়ই বলুন আমার জানার পরিধি বাড়িয়েছে এসব বই।

বড় বড় ডিগ্রিধারীকেও দেখা যায় স্বাস্থ্য, খাদ্য, চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক ব্যাপারে অসচেতন। শিক্ষিত মানুষকেও বাল্যবিবাহে আগ্রহী দেখা যায়।  ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষরা যদি কুসংস্কাচ্ছন্ন হন তাহলে কী লাভ এই শিক্ষা ব্যবস্থায়? প্রকৃত শিক্ষাই পাওয়া যায় না এই ব্যবস্থায়।

তাই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে মানুষ পাঠ্যপুস্তুকের সাথে সাথে ব্যবহারিক শিক্ষাও পায়। আমাদের শিক্ষার মধ্যেই  সচেতনতার বিষয়গুলো থাকতে হবে।

বাংলাদেশে যে সব বিষয়ে নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থা।

ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার সুফল-কুফল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষকে শিক্ষার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। সবাইকে স্কুলে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা স্কুলে গিয়ে কী শিখছি? এ প্রশ্ন আমাদের করতে হবে।

প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় শিখেছি- ‘অজগারটি আসছে তেড়ে, আমটি আমি খাব পেড়ে।’ কিন্তু অজগর আর আম কী? জানার উপায় নেই। আমাদের এসব দেখার সুযোগ নেই।  ইংরেজিতে এক্স-রে শব্দ শিখি, বাক্য গঠন করি; কিন্তু এক্স-রে-এর অর্থ কী জিজ্ঞেস করলে, কোন উত্তর মেলেনি।

অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা মাধ্যমিকের সব কঠিন অংকের সমাধান করতে পারছি। কিন্তু কোন সহজ সূত্র প্রমাণ করতে আমরা কেউই পারি না।

নতুন চালু হওয়া সৃজনশীল ব্যবস্থা ‘উপদ্দীপক’ পড়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কিন্তু সত্যি বলতে সৃজনশীল প্রশ্নের অর্থই আমরা কেউ জানি না। ক্লাসে শিক্ষক এসে আমাদের চারটি নমুনা প্রশ্ন দিয়ে বলেন ‘উদ্দীপক পরীক্ষার হলে পেয়ে যাবে।’ কিন্তু প্রশ্নগুলো এমন যে তার জন্যে উদ্দীপকের কোন প্রয়োজনই পড়ে না, বরং কখনো কখনো দেখা গেছে, উদ্দীপকের কারণেই অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।

অনেক অসাধু শিক্ষক সাজেশনের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের চাপ দেন। যারা তাদের কাছে পড়ে না পরীক্ষায় সে সব শিক্ষার্থীর নম্বর কমিয়ে দেন। বিশেষ করে প্রতীদ্বন্দ্বী শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থী পড়ে তার বেলায় তো কথাই নেই।

তবে শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু ভাল দিকও আছে। এখনকার সিলেবাস এমন ভাবে তৈরি যে, প্রতিটি ক্লাসেই পরবর্তী ক্লাসের পাঠ্য বোঝার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বরের আশায় যেভাবে বিভিন্ন গাইড বইয়ে আসক্ত তাতে পাঠ্যবইয়ের মর্ম বোঝার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলে।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল করার লক্ষ্যে বর্তমানে যে সৃজনশীল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মত, এটি আমাদের চিন্তাশীল তো করছে না, বরং বইয়ের আকার ছোট করে দিয়ে  জানার সুযোগ ও কমিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com