এখন নারীরা কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই কিন্তু এক সময় সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারের জন্য নারীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। আর সে সময় আগমন ঘটে এ নারী চিকিৎসকের।
নারীদের চিকিৎসা পেশায় আসতে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ দেশের নারী সমাজের অগ্রগতির অনুপ্রেরণা।
এই নারী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মধ্যপ্রদেশের রানজানগাঁওয়ে জন্ম নেন। তার পৈত্রিক বাড়ী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কাজীবাড়ি।
তার বাবার নাম আবদুস সাত্তার ও মা আঞ্জুমান নেসা। বাবা ছিলেন বৃহত্তম ফরিদপুরের প্রথম মুসলিম ডাক্তার।
তিনি ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯২৯ সালে আইএসসি পাস করেন। প্রথম মুসলিম বাঙালি নারী হিসেবে তিনি দিল্লীর লেডি হার্ডিং গার্লস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
জোহরা বেগম ১৯৩৫ সালে প্রথম স্থান নিয়ে এমবিবিএস পাস করায় তাকে সম্মানজনক ভাইস রয়াল ডিগ্রি দেয়া হয়।
১৯৪৯ সালে প্রথম বাঙালি মুসলমান নারী ডাক্তার হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কলেজে যোগ দেন। সেখানে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলেন।
কুসংস্কার দূর করে, অসুস্থ নারীদের সঠিক চিকিৎসা বিষয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের সচেতন এবং নারীদের হাসপাতালে এসে সেবা নেয়ার মনোভাব সৃষ্টি করেন। তিনি শুধু চিকিৎসকই ছিলেন না, একজন ভাল শিক্ষকও ছিলেন।
তার হাত ধরেই বাঙালি মুসলিম নারীরা চিকিৎসা পেশায় এসেছেন, জন্ম হয়েছে এদেশের চিকিৎসাঙ্গনে অসংখ্য নারী ডাক্তারের।
তার এই উন্নত শিক্ষার কথা বাঙালি নারী মনে রাখবে চিরকাল। সুচিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রেও তিনি একজন সার্থক অধ্যাপক।
ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন এ নারী। উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশের প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক হিসেবে তিনি এক ইতিহাস।
তিনি শুধু চিকিৎসকই নন সমাজ সেবকও ছিলেন। নারী-পুরুষ সবার চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সমাজের বিভিন্ন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আহতদের সেবা করেছেন।
তিনি অনেক পুরস্কার পান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০২ সালে রোকেয়া পদক। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন থেকে বহু সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন।
২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ৯৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি।