বইয়ের পাতায় অ্যাডভেঞ্চার

বইয়ের পাতায় অ্যাডভেঞ্চার

কখনও ‘লোহিত সাগরের হাঙ্গর’ কিংবা ‘চন্দ্রলোকে অভিযান’ বইগুলো পড়ে কি ইচ্ছে করেনি অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়তে? ইচ্ছে করাটাই স্বাভাবিক। তবে দেশে দেশে আর দূর তেপান্তরে ঘুরে বেড়ানোটা কিন্তু মুখের কথা নয়। কেননা এই ধরণের আবদারগুলো বাবা-মা নিশ্চয়ই রাখবেন না। তবে হ্যাঁ, বই পড়ে কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াতে তো নেই মানা!

বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বেশ কিছু অ্যাডভেঞ্চার বই, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘হাত কাটা রবিন’,  ‘দস্যি ক’জন’, ‘দুষ্ট ছেলের দল’ পড়েছি।

অ্যাডভেঞ্চারের নাম শুনতেই মনে পড়ে গেছে শঙ্করের কথা। আফ্রিকার রিখটার সলভেন্ট পর্বতের সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের লোমহর্ষকর কাহিনী। হ্যাঁ, বলছিলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৮-১৯৫০) ‘চাদেঁর পাহাড়’ বইটির কাহিনী। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘মিছমিদের কবচ’ , ‘হীরা মানিক জ্বলে’সহ অসংখ্য অ্যাডভেঞ্চার বই।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও (১৯৩৪-২০১২) অ্যাডভেঞ্চার বই লিখেছেন অনেক। গোয়েন্দা সিরিজ ‘কাকাবাবু’ ছাড়াও ‘জলদস্যু’, 'আঁধার রাতের অতিথি’, ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ বইগুলো বাঙালি পাঠকরা একেবারে লুফে নিয়েছিল। 

প্রদোষ মিত্র, তপেশ মিত্র আর লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুর কথা না বললেই না। কেননা, এরা তিনজনই হলেন সত্যজিৎ রায়ের (১৯২১-১৯৯২) অমর সৃষ্টি গোয়েন্দা সিরিজ ‘ফেলুদা’র অমর তিন চরিত্র। 

পড়েছি রিফর্ম ক্লাবের ৫০ হাজার পাউন্ডের একটি বিশ্ব মাতানো বাজির কথা। আন্দ্রে স্টুয়ার্ডের সঙ্গে বাজি ধরে নতুন ভৃত্যকে নিয়ে আশি দিনে আস্ত পৃথিবীকে এক চক্কর দেবার অভিযানে বেরিয়ে পড়া সেই ফিলিয়াস ফগ আমাকে রোমাঞ্চিত করেছিল। বলছিলাম জুলে ভার্নের (১৮২৮-১৯০৫) ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ বইটির কাহিনী। অ্যাডভেঞ্চারই এই ফারসি লেখকের ট্রেডমার্ক। লিখেছেন ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’, ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ’-এর মত বিখ্যাত সব অ্যাডভেঞ্চারাস বই।

জাদু আর অ্যাডভেঞ্চারের এক সম্পৃক্ত দ্রবণ বানিয়েছেন জে কে রাওলিং। বুঝতেই পারছ, ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের কথা বলছি। একটু ভিন্ন ধাঁচের বই পড়তে চাইলে এর বিকল্প নেই।

স্যামুয়েল ক্লিমেন্স লংহর্ন যাকে আমরা ‘মার্ক টোয়েন’ (১৮৩৫-১৯১০) নামে চিনি। বিশ্বের হাজার কিশোরের মনে দাগ কেটেছেন ‘টম সয়্যার’ কিংবা ‘হাকলবেরি ফিন’-এর মতো চরিত্র দিয়ে।

অ্যাডভেঞ্চার আর রহস্য দুইয়েরই ছোঁয়া দিয়েছেন ভিক্টর হুগো। ‘লা মিজারেবল’, ‘দ্য ম্যান হু লাফস’, ‘দ্য হ্যঞ্চব্যাক অব নটর ডেম’ ইত্যাদি বইগুলো তার অনবদ্য সৃষ্টি।

এবার বলব এক ইংরেজ সাহিত্যিকের কথা। ১৯০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। তার লেখা বিখ্যাত একটি বইকে কেন্দ্র করে ১৯৬৭ সালে ‘ডিজনি পিকচারস’ প্রথম একটি এনিমেশান চলচ্চিত্র বানায়। এরপর ২০১৬ সালে ‘জন ফ্রাভু’-র পরিচালনায় থ্রিডি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন করে নির্মিত হয় চলচ্চিত্রটি। বলছি রুডিয়ার্ড কিপলিং এর ‘দ্য জাঙ্গাল বুক’ বইটির কথা। এছাড়াও লিখেছেন ‘ক্যাপ্টেন্স কারেজাস’-এর মতো বিখ্যাত সব অ্যাডভেঞ্চারাস বই।

যখন ছোট ছিলাম কটকটে ছোটছোট অক্ষরের বইগুলো পড়তে ভালো লাগত না। তখন আমি কমিক পড়ে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতাম। ছোটদের জন্যই তো ‘হার্জ’ সাহেব সুন্দর সুন্দর কার্টুন এঁকে গোয়েন্দা ‘টিনটিন’ সিরিজ লিখে গেছেন। এছাড়াও ‘অ্যাস্টেরিক্স’ কিংবা ঢাকা কমিক সিরিজ তো আছেই।

আগে ভাবতাম অ্যাডভেঞ্চার বুঝি কেবল বই কিংবা সিনেমাতেই সম্ভব। বাস্তবে কি আর হয়? হয়, হয়। ক্যাসেন্ড্রা ডি পেকল নামের ২৭ বছর বয়সী এক তরুণী পুরো পৃথিবীটাকে একবার চক্কর দিয়ে ফেলেছেন। ছোটবেলা থেকেই তার নানান দেশ, মানুষ আর প্রকৃতি সম্পর্কে জানার ইচ্ছা। সে থেকেই একদিন ঘরের দেয়ালে বিশ্বের মানচিত্র টানিয়ে হিসেব কষে নেন ১৯৬টি দেশের। আর এই মিশনের নামও দিয়ে দেন ‘এক্সপেডিশন ১৯৬’। ‘কেসিডিপেকলডটকম’ নামের একটি সাইটে এমনটাই পড়লাম।

এসব বই পড়তে পড়তে আমিও স্বপ্ন দেখি অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ার।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com