পাকিস্তানের শিক্ষানীতি পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে এদিন প্রাণ দিয়েছিলেন গোলাম মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ, বাবুল প্রমুখ।
পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষা সচিব এসএম শরীফকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে এ শিক্ষা কমিশন তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। কিন্তু প্রতিবেদনটি বাঙালির স্বার্থবিরোধী এবং শিক্ষা সংকোচন নীতি বলে অভিযোগ করে বাঙালি ছাত্রসমাজ। পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা এ নীতি প্রত্যাখান করে।
শরীফ শিক্ষা কমিশন শিক্ষার ব্যয়ভার বহনে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়। তাই এতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ডিগ্রি কোর্সকে তিনবছর মেয়াদী করার প্রস্তাবও ছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ছাত্র সংগঠন এ নীতির প্রতিবাদ জানায়। হঠাৎ করে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গুরুভারও মেনে নিতে পারেনি অনেক শিক্ষার্থী। আর তাই সভা-সমাবেশ, ধর্মঘট, মিছিল, নানাভাবে এ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করে তারা।
১৯৬২ সাল থেকে আইয়ুব সরকার এ নীতির বাস্তবায়ন শুরু করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেয় কিছু ছাত্র সংগঠন।
সংগঠনগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সকালে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে জগন্নাথ কলেজের সামনে পুলিশ গুলি ছুড়েছে, গুজব শুনে তারা নবাবপুরের দিকে এগিয়ে যায়।
হাইকোর্টে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। তারা পুলিশের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে আবদুল গণি রোডে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির আঘাতে নিহত হন গোলাম মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ ও বাবুল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলে ১৯৬৪ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশনের নীতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
পাকিস্তান শাসনামলে নিজেদের দাবি ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক রক্ত দিয়েছে বাংলার মানুষ। মোস্তফা-ওয়াজিউল্লাহ-বাবুলরাও উদাহরণ হয়ে থাকবেন বাঙালির প্রতিবাদী মানসিকতার।
১৭ সেপ্টেম্বর, সবার জন্য শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একতা আর সংগ্রামের জন্য শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন সব সংগ্রামী।