‘আমি চির শিশু, চির কিশোর’

বিদ্রোহী কবিতায় কাজী নজরুল নিজেকে ‘আমি চির শিশু, চির কিশোর’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার সেই একই কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’।
‘আমি চির শিশু, চির কিশোর’

কবির 'বিদ্রোহী' কবিতা আজও যে কোনো প্রতিবাদের সূচনা তৈরি করতে পারে।

নিজে দু:খী ছিলেন বলেই বঞ্চিত ও নিপীড়িতের কষ্ট বুঝতে পারতেন সহজেই। আর তাই তার লেখা, বঞ্চিতের কণ্ঠস্বর হয়ে অনুরণিত হতো। টলিয়ে দিত অত্যাচারীর আসন।

নজরুলের ডাক নাম ছিল দুখু। নানা টানাপোড়েন, দু:খ-কষ্টের মাঝ দিয়েই ব্রিটিশ শাসনামলে সেই দুখু ক্রমশ হয়ে উঠলেন বিদ্রোহী। তার লেখা কাঁপিয়ে দিল শাসকদের। কারাবরণ করতে হলো তাকে। কারাগারে বসেই শেকল বাজিয়ে শেকল ভাঙার গান রচনা করলেন তিনি।

সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার আর কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তিনি যেমন মেনে নেননি নারীর প্রতি অবিচার আর বৈষম্য, তেমনি মেনে নেননি দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার।

এমন একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যারা ধর্মের ভয়ে নয়, মানবতার স্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, মানুষকে সাহায্য করবে। ইসলামিক গানের পাশাপাশি লিখেছেন শ্যামা সংগীত ও কীর্তনীয়া ঢঙের গানও।

সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের লেখা পড়লে অবাক হতে হয়। ‘সাম্যবাদী’, ‘মানুষ’ এবং ‘নারী’ কবিতায় নজরুল ধর্মীয় কুসংস্কার এবং উগ্রতার বিপক্ষে মানবতার কথা তুলে ধরেছেন।

সভ্যতার বিবর্তনে মানুষ আধুনিকতর হচ্ছে। কিন্তু কেউই বোধ হয় কবির মত আধুনিক চিন্তা করতে সক্ষম হইনি। কিংবা এখনও অনেক মানুষ ধর্মান্ধতায় মগ্ন। তাই মুক্তচিন্তা যারা করছেন, তাদের সামনে বিশাল এক দেয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন হয়েছিল কবির জীবনে।

১২ ভাদ্র কবির প্রয়াণ দিবস। এই দিনে গভীর শ্রদ্ধা রেখেই তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, ‘আমি সেইদিন হব শান্ত যেদিন উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com