কৃষ্ণের বাবা মা দুজনেই ছিলেন যাদব বংশীয়। মামা কংস তার বাবা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে বসেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে কংস জানতে পারেন যে বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং একে একে ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ বাসুদেবের প্রথম স্ত্রী রোহিণীকে দান করেন। এরপরই কৃষ্ণের জন্ম।
কংসের ষড়যন্ত্রে কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন তাই তার জন্মের পরেই দেবতার অনুগ্রহে কারাগার থেকে পালিয়ে বাসুদেব তাকে গোকুলে যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। এরাই ছিলেন কৃষ্ণের পালক মাতা-পিতা।
বাংলাদেশে জন্মাষ্টমী উৎসব পালনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইসলাম খাঁ ঢাকা আসার আগে পুরানো ঢাকার বংশালে পিরু মুনসির পুকুরের পাশে বাস করতেন এক সাধু। এই সাধু রাধা-অষ্টমী উদযাপন উপলক্ষে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে শোভাযাত্রা করে জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করতেন।
এর দশ বারো বছর পর সাধু ও বালকদের উদ্দেশে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উপলক্ষে নবাবপুরের ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাশ বসাকের উদ্যোগে জাঁকজমকের সাথে শোভাযাত্রা হত। কৃষ্ণদাশ বসাকের সময় থেকেই জন্মাষ্টমী একটি পূর্ণ উৎসবে পরিণত হয়। তখন এ শোভাযাত্রাকে বলা হত ‘কালো গোপালের মিছিল’।
এর প্রায় একশ বছর পরে উর্দুবাজারের গঙ্গারাম ঠাকুর নামে এক বৈষ্ণব ব্রাক্ষণ নবাবপুরের বসাকদের অনুকরণে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করেন। তার মিছিল আসত উর্দু রোড থেকে নবাবপুর পর্যন্ত। গঙ্গারাম ঠাকুরের মিছিল বেশিদিন চলেনি। কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে নবাবপুরের বিভিন্ন মিছিলকে এক করে একটি মিছিলের রূপ দেয়া হয়েছিল। যার নাম ছিল নবাবপুরের ইতিহাস।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ও বিশ শতকের প্রথমার্ধে লাঠি-সোটা হাতে লাঠিয়ালরাও অংশ নিত এই মিছিলে। মহররমের মিছিলেও এরাই থাকতো। সমাজে এই লাঠিয়ালদের তখন খুব গুরুত্ব ছিল।
১৮ অথবা মতান্তরে ২১ অগাস্ট তারিখে কৃষ্ণের জন্ম। আর তার জন্মদিনটিই জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। আজও অসাম্প্রদায়িকভাবেই এই উৎসব পালিত হয়। আর জন্মাষ্টমীর দিনটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন।