‘সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি’

ইদানীং বই পড়ছি কম, তবে ছেড়ে দিইনি একেবারে। সম্প্রতি পড়া বইগুলোর মধ্যে ভালো লেগেছে শাহরিয়ার কবিরের লেখা ‘সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি’। বইটি লেখকের স্কুলজীবনের স্মৃতি নিয়ে লেখা।
‘সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি’

একজন মানুষের শ্রেষ্ঠতম স্মৃতি তার স্কুলজীবন। সবকিছুকে ভুলতে পারলেও কেউ স্কুলজীবনের কথা কখনও ভুলতে পারে না। বইটি পড়ার সময়েও এই সত্যটি বারবার উপলব্ধি করেছি।

লেখক তার স্মৃতির মণিকোঠা থেকে মুক্তো খুঁজে ঠাঁই দিয়েছেন বইটিতে। তার শৈশব এবং স্কুলজীবনের আগের স্মৃতিও ঠাঁই পেয়েছে এখানে। বাংলা সাহিত্যে মননশীল ধারার কারিগর শাহরিয়ার কবির।

তার প্রতিটি বইয়ে ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। এই বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

অল্প বয়সে মাকে হারিয়ে লেখক বড় হয়েছেন একা একা। বড় ভাইয়ের শাসন আর নিঃসঙ্গতা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিল সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুল, যে বিদ্যাপীঠকে নিয়ে তিনি লিখেছেন এই স্মৃতিময় বইটি।

বইটিতে আছে তার বড় হওয়ার কথা, বন্ধুদের কথা, মানুষকে মানুষ ভাববার কথা। আছে তার অপরিণত বয়সে মানুষের মাঝে শ্রেণিভেদ দেখে শঙ্কিত হওয়ার কথা। সব ধর্মের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথাও আছে। লেখকের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তুলতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল তার স্কুল। এখানেই তিনি শিখেছেন কী করে সব ধর্মের উত্‍সবে আনন্দ করা যায়, কীভাবে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে বন্ধুত্ব করা যায়।

লেখকের শৈশব আর কৈশোরের গল্পগুলো পড়ে হয়তো সবাই বিস্মিত হবেন। এ তো সব পাঠকের স্কুলজীবনের স্মৃতি! ক্লাস পালানো, সিনেমা দেখা, বই পড়া, পিকনিক, খুনসুটি, হৈ চৈ- সবই তো লেখকের মতো করে প্রত্যেকটি মানুষ উপভোগ করেন  নিজ শৈশব-কৈশোরে।  

লেখক বলেছেন, ‘স্কুলজীবনের বন্ধুদের কি কখনো ভোলা যায়?’ এই বাক্যটির মাঝেই লুকিয়ে আছে এক চিরন্তন প্রশ্ন, সত্য, বন্ধুবাত্‍সল্য আর স্মৃতিকাতরতার দীর্ঘশ্বাস।

সমগ্র স্কুলজীবনের কথা দুই মলাটের মাঝে আটকে রাখা খুব কঠিন তবে লেখক তা করতে পেরেছেন অনায়াসে। গভীর মমতা আর সূক্ষ্ম অনুভব দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন বইটিকে। বইটি বারবার পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে অতীতের দিনগুলিতে।  

লেখকের মতে সব মানুষই অতীতের স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে সোনালি অতীত ফিরে পাবার। এই স্বপ্নই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। স্বল্প পরিসরে লেখা এই বইটি হয়তো সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে সাহিত্যমানে উৎরাবে না কিন্তু হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করলে এই বইয়ের বিশালতা অসীম বলে মনে হবে। এখানেই এই লেখার  সার্থকতা। বিচিত্র রঙে বইটিতে ফুটিয়ে নানান ছবি।

কলম-তুলির প্রতিটি আঁচড়ে লেগে আছে তার শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর কথা, পুরনো খুনসুটি আর অবাধ্যতার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে অজান্তেই হেসে উঠবে মন। এভাবেই বইটি মোহনীয় শক্তিতে পাঠকের মন জয় করেছে। মনে করিয়ে দিয়েছে তার ফেলে আসা দিন, শৈশব, কৈশোর আরও কত কী!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com