জন্মটা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে। ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কৈশোরে পা দেওয়ার আগেই বাবাকে হারান নজরুল। ছোটবেলায় তাকে সবাই ডাকতো ‘দুখু মিয়া’ নামে।
বাবার মৃত্যু, পরিবারে অভাব-অনটন সবকিছু বাদ সাধে তার পড়ালেখায়। মক্তবে পড়ালেখা করেন তিনি। সেখান থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পাশ করার পর শিক্ষকতা শুরু করেন। যোগ দেন একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও।
অল্প বয়সেই পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য নানা পেশায় জড়িয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। ছোটবেলায় লেটো গানের দলেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
লেটো গানের দল ছেড়ে ১১ বছর বয়সে আবারো ফিরে গিয়েছেন স্কুল জীবনে। প্রথমে রাণিগঞ্জ সিয়ারসোল স্কুল এবং পরে মাথরুন স্কুলে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে রুটির দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই সুযোগ পেলে কবিতা আর গান লিখতেন কবি।
বেশ বৈচিত্রম্যয় ছিল নজরুলের জীবন। ১৮ বছর বয়সে মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়েই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন প্রায় আড়াই বছর। সৈনিক জীবন শেষ করে ‘নবযুগ’ নামের এক সান্ধ্য পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন।
ইংরেজদের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নজরুল। প্রকৃতপক্ষে নজরুল ছিলেন সাম্যবাদী। তিনি শোষণের প্রতিবাদ করতেন। প্রতিবাদ করতেন বৈষম্যের। ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার কলম যেমন চলেছে তেমন চলেছে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে। চলেছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এমনকি নারী-পুরুষের বিভেদের বিরুদ্ধেও লিখেছেন অনেক।
১৯২২ সালে তার লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কবিতাগুলোর মাধ্যমে অত্যাচারী আর শোষক সমাজের বিরুদ্ধে জেগে উঠার আহ্বান জানাতেন তিনি। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার কারণে জেলও হয়েছিল। সেখানেও করেছেন কাব্যচর্চা।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো অগ্নিবীণা। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো প্রবন্ধ বা উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন নজরুল। লিখেছেন হাজার হাজার গান। সব মিলিয়ে সাহিত্যের জগতে আপন আলোয় উজ্জ্বল তিনি। লিচু-চোর, খুকি ও কাঠবিড়ালীর মতো অনেক শিশু-কিশোর বান্ধব কবিতাও ছিল তার।
১৯৪২ সালে এক দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন তিনি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই এ রোগের কারণে কর্মজীবন শেষ হয় তার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন তিনি। পান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালে ২৯ অগাস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।