তাছাড়া ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিনকে বিশ্ব সেবিকা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিশ্ব। ১২ মে বিশ্ব সেবিকা দিবস।
১৮২০ সালের ১২ মে বাবা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিঙ্গেল এবং মা ফ্রান্সিস নাইটিঙ্গেলের ঘর আলো করে জন্ম গ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। জন্মস্থান ইতালির ফ্লোরেন্স শহরের নামানুসারেই মেয়ের নামকরণ করেন বাবা-মা।
নারী শিক্ষার প্রচলন না থাকলেও ফ্লোরেন্সের বাবা তাতে খুব প্রয়োজন বোধ করেছিলেন। তাই দুই মেয়েকে তিনি বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।
ফ্লোরেন্স বিশ্বাস করতেন স্রষ্টা তাকে সেবিকা হওয়ার জন্যই পাঠিয়েছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই এই উপলব্ধি করেন তিনি। তখন সেবিকা পেশাককে নিচু দৃষ্টিতে দেখা হতো বলে ফ্লোরেন্সের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাননি বাবা-মা। অবশেষে হাল না ছাড়া মেয়েটির সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন।
অনুমতি মিললে ১৮৫১ সালে সেবিকার প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে পাড়ি জমান তিনি। ১৮৫৩ সাল থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের ‘কেয়ার অব সিক জেন্টলওমেন ইনিস্টিটিউটের’ তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করেন।
১৯৫৪ সালে ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের যুদ্ধ চলাকালে ৩৮ জন সেবিকাসহ নিজেকে যুদ্ধ ময়দানে নিয়োজিত করেন ফ্লোরেন্স। দুই বছর ধরে চলা ক্রিমিয়া যুদ্ধে ফ্লোরেন্স ও তার সেবিকারা আহতদের ক্লান্তিহীন সেবা দিয়ে গেছেন।
১৮৫৫ সালে তিনি সেবিকা প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। চার বছরে সংগ্রহ করেন প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। যা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নেও তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
১৮৫৯ সালে রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির প্রথম সারির সদস্য নির্বাচিত হন ফ্লোরেন্স। ১৮৬০ সালে তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং’।
ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’।
ফ্লোরেন্সকে অসংখ্য পদক আর উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছে। ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। ১৯০৭ সালে প্রথম নারী হিসাবে খেতাব লাভ করেন ‘অর্ডার অব মেরিট’। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈন্যদের সেবার মাধ্যমে নার্সিংকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় তাকে ডাকা হতো ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’।
১৯১০ সালের ১৩ অগাস্ট ৯০ বছরের মারা যান তিনি। এরপর ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে সেন্ট মার্গারেট চার্চে তাকে সমাহিত করা হয়।
এই মহিয়সী নারীর জন্য একাধিক স্বীকৃতিও রাখা রয়েছে। তার নামে চারটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় ইস্তাম্বুলে। লন্ডনের ওয়াটারলু ও ডার্বিতে রাখা হয়েছে তার প্রতিকৃতি। লন্ডনের সেন্ট থোমাস হসপিটালে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নামে একটি মিউজিয়াম রয়েছে। ব্রিটিশ লাইব্রেরি সাউন্ড আর্কাইভে তার কণ্ঠস্বর সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে ফ্লোরেন্স বলেছেন- ‘যখন আমি থাকব না, সেই সময় আমার এই কণ্ঠস্বর আমার মহান কীর্তিগুলোকে মানুষের কাছে মনে করিয়ে দেবে এবং এসব কাজের জন্য উৎসাহ জোগাবে।’
ফ্লোরেন্সের জীবনী নিয়ে ১৯১২, ১৯১৫, ১৯৩৬ ও ১৯৫১ সালে চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন এবং নার্সদের অন্যান্য সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিনটি উদযাপন করে।