সেরা কিছু কিশোর উপন্যাস আছে আমার সংগ্রহে। তার মধ্যে একটা উপন্যাস আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে। বইটির নাম ‘দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাজ।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসের ছোট্ট ব্রুনোর নির্মম পরিণতি বর্তমানের যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার অসহায় শিশুদের কথা মনে করিয়ে দেয়। সত্যি আমরা কী সভ্য হচ্ছি? না এগিয়ে যাচ্ছি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দিকে?
১৯৪২ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ইটালিতে চলছে তখন হিটলারের দমন-পীড়ন নীতি। উপন্যাসের গল্পটি আবর্তিত হয়েছে ব্রুনো নামের নয় বছরের এক বাচ্চাকে নিয়ে। মা, বাবা আর বোনের সাথে বার্লিনের এক প্রাসাদোপম বাড়িতে থাকে ব্রুনো। তার বাবা সেনাবাহিনীর কর্নেল।
হঠাৎই একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ব্রুনো দেখল তারা মা সবকিছু গোছগাছ করছেন। বার্লিন ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে।
নতুন যায়গায় এসে ব্রুনোর মোটেই ভালো লাগে না। একটাও খেলার সাথী পায় না সে। নি:সঙ্গ কাটে তার দিনগুলো। ব্রুনো লক্ষ্য করে তাদের বাসার পাশে অনেকখানি জায়গা উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা।
তার ভেতরে অনেক মানুষ বাস করে। রুগ্ন আর ফ্যাকাসে চেহারা তাদের। সবার পোশাক একই ধরণের, ডোরাকাটা কাপড়ের। যুদ্ধবন্দি ইহুদি ছিলেন তারা।
একদিন একটি ছোট ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়। ছেলেটি সেই কাঁটাতারের ওপারের মানুষদের সাথে থাকে। ওর নাম সুমেল। ছেলেটি ব্রুনোরই বয়সী।
ছেলেটির সাথে ব্রুনোর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কাঁটাতারের দুধারে বসে দু জন কথা বলতে থাকে। প্রায়ই সুমেলের জন্য লুকিয়ে খাবার নিয়ে আসতো ব্রুনো। এভাবে এক বছর কেটে গেল। যুদ্ধবন্দি ইহুদি সুমেল আর ব্রুনো কেউ কাউকে ছুঁতে পারল না।
ব্রুনোর বার্লিনে চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেল। ওকে চলে যেতে হবে শুমেলকে ছেড়ে। তখন ব্রুনো একটা দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলল। শুমেলের কাছ থেকে বন্দীর মতো পোশাক পরে কাঁটাতারের ভেতরে ঢুকে পড়ল। যুদ্ধ বন্দি রুগ্ন মানুষ দেখে খুব কষ্ট পেল ও।
যখন ব্রুনো বাড়ি ফিরে আসবে তখন ধরা পড়ার ভয়ে একদল লোকের সারিতে ঢুকে পড়ে। সেই দলটিকে একটি অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে সবাইকে মেরে ফেলা হলো। ব্রুনোর আর বাড়ি ফেরা হলো না। যুদ্ধের নির্মম শিকার হলো ব্রুনো আর সুমেল।