শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ

বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশের ১১৯ তম জন্মদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, গীতিকার, সম্পাদক ও অধ্যাপক।
শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ

১৮৯৯ সালে বরিশাল জেলায় কুসুমকুমারী দাশ ও সত্যানন্দ দাশের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন কবি জীবনানন্দ দাশ।

জীবনানন্দের বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

তার মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন কবি। সাংসারিক কাজের ফাকে ফাকে কবিতা লিখতেন। তার সুপরিচিত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’।

মা বাবার তিন সন্তান অশোকানন্দ দাশ ও সুচরিতা দাশের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ বড়। আর তাদের বড় ছেলের ডাকনাম ছিল মিলু।

সাহিত্যচর্চা ও কবিতা রচনার প্রেরণা মায়ের কাছেই পেয়েছেন মিলু। বাড়িতে মায়ের কাছেই হয়েছে শিক্ষার হাতেখড়ি। কেননা তার বাবা কম বয়সে স্কুলে ভর্তির বিরোধী ছিলেন।

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের কবিকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকিউলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দু'বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বরিশাল ত্যাগ করেন।

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইন পড়া শুরু করেন।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ কলকাতার সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন ছেড়ে দেন।

এরপর চলতে থাকে তার সাহিত্য চর্চা ও জীবনসংগ্রাম।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ তার পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে যান, যা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তিনি সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে জীবনানন্দের লেখা 'মৃত্যুর আগে' কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে মন্তব্য করেন কবিতাটি 'চিত্ররূপময়'।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ঝরাপালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির ইত্যাদি। অল্পবয়সেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯২৭ সালে।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে ১৯৫২ সালে তিনি রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার ও ১৯৫৫ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৫৪ সালের ৪ অক্টোবর  কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দূর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে যায়। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়।

চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডা. ভূমেন্দ্র গুহসহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।

তবে জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে ১৯৫৪ সালের ২২  অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কবি না ফেরার দেশে চলে যান।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com