শুভ জন্মদিন প্রিয় সাহিত্যিক

নন্দিত লেখক, শিক্ষাবিদ, পদার্থবিদ ও শিশু-কিশোর ঔপন্যাসিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্মদিন ২৩ ডিসেম্বর।

১৯৫২ সালে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ ও মা আয়েশা আক্তার খাতুনের কোল জুড়ে তিনি জন্ম নেন।

তার জন্মস্থান সিলেটে। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই।

বাবার পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। ছোটবেলায় তার ডাক নাম ছিল বাবুল। বাবা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই আবহাওয়ায় জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন।

১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হন। এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে।

১৯৭৬ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান তিনি। তার  বিষয় ছিল - 'Parity violation in Hydrogen Atom. সেখানে পিএইচডি করার পর বিখ্যাত ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। সেই বছরই তিনি আমেরিকা ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। একই বছর সিএসই বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তার প্রথম সায়েন্স-ফিকশন গল্প 'কপোট্রনিক ভালোবাসা' সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। এর উত্তর হিসেবে তিনি একই ধরণের বেশ কয়েকটি কয়েকটি লেখা পাঠান।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম খুবই প্রশংসা করেন এবং এই ঘটনায় তিনি এ ধরণের আরও বই লিখতে উৎসাহিত হন। তার প্রথম দিকের বিজ্ঞান কল্পকাহিনীগুলো পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। সুদূর আমেরিকাতে বসে তিনি বেশ কয়েকটি সায়েন্স-ফিকশান রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন, প্রতি বইমেলাতে তার নতুন সায়েন্স ফিকশান কেনার জন্যে পাঠকেরা ভিড় জমায়।

তার লেখা কিশোর উপন্যাস হাত কাটা রবিন, দীপু নাম্বার টু,  দুষ্টু ছেলের দল, আমার বন্ধু রাশেদ, স্কুলের নাম পথচারী বেশ জনপ্রিয় হয়।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে "নিউরনে অনুরণন" ও "নিউরনে আবারো অনুরণন" বই দুটি গণিতে আগ্রহীদের কাছে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

তার লেখা অনেকগুলো কিশোর উপন্যাস বাংলা কিশোর-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। একাধিক কিশোর উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র।

তার কর্মযজ্ঞ যেমন তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দিয়েছে তেমনি অর্জনের ঝুলিতে ঢুকেছে অনেক পুরস্কারও।

২০০২ সালে কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেসা পদক, ২০০৩ সালে শেলটেক সাহিত্য পদক, ২০০৪ সালে ইউরো শিশুসাহিত্য পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এছাড়া ২০০৫ সালে  শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক, আমেরিকা এল্যাইমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যলাইমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক পান তিনি।

জাফর ইকবাল হ্যালোকে একাধিকবার সাক্ষাৎকার দেন।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের শৈশব বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার জন্ম সিলেটে। এরপর সিলেট থেকে গিয়েছি জগদ্দল। সেখান থেকে গিয়েছি পঞ্চগড়। পঞ্চগড় থেকে গিয়েছি চট্টগ্রাম। সেখান থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান। এরপর ক্রমে বগুড়া, কুমিল্লা, পিরোজপুর। আসলে বাবা এক স্থানে এক বছর কি দেড় বছর থাকতেন। তাই পুরো দেশ ঘুরে ঘুরেই আমার ছোটবেলা কেটেছে। সাধারণ ছেলেদের মতোই থাকতাম আমি। মাঠে খেলতাম, নদীতে সাঁতার কাটতাম। স্মৃতিচারণ, অভিজ্ঞতাসহ জাফর ইকবালের নানান গল্প উঠে আসে এই সাক্ষাৎকারে। তিনি বেঁচে থাকুন আরও অনেক বছর। তার জন্মদিনে এই শুভকামনা। শুভ জন্মদিন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com