এছাড়া 'বরিশালের ইতিহাস' গ্রন্থে সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাঙালি জাতির আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ।
দেশের অন্য অঞ্চলের সাঁওতাল, গারো, হাজং, মগ ও চাকমাদের মতো বরিশাল অঞ্চলে ‘চন্দ্রভদ্র' নামে এক জাতির বাস। বাংলার শস্য ভাণ্ডার বরিশাল একদা ‘এগ্রিকালচারাল ম্যানচেস্টার' নামে পরিচিত ছিল। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এ অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকে দিয়ে এসেছে অফুরন্ত ধন-সম্পদ আর সীমাহীন প্রাচুর্যের সম্ভার। এখানকার অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বাংলার অর্থনীতি।
পলি গঠিত উর্বর এ অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকেই ছিল কৃষির জন্য উৎকৃষ্ট এবং বসবাসের জন্য উত্তম। কৃষিই ছিল এ দেশের অর্থনীতির মূল উৎস।
পর্যটক রালফ ফিস ১৫৮০ সালে বাকলাকে অত্যন্ত সম্পদশালী আখ্যায়িত করে এখানকার প্রচুর চাল, কার্পাস, রেশমবস্ত্র ও সুবৃহৎ ঘরের কথা উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বের অন্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করে আসছে এ অঞ্চলটি।
বরিশাল অঞ্চলের জনগণ সত্যিকার অর্থে অত্যন্ত আরাম প্রিয় ও ভোজন বিলাসী। পারিবারিকভাবে এরা খুবই ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক স্বভাবের। তেলে-ঝালে রকমারী সুস্বাদু খাবারের পরে একটু মিষ্টি ছাড়া চলে না।
এখানে খেজুরের রস, গুড়, নারিকেল, ছানার তৈরি শতাধিক রকমের পিঠে হয়। অতিথি আপ্যায়নে বরিশালের জনগণের সুনাম রয়েছে। কবি ঈশ্বরগুপ্ত বরিশালে বেড়াতে এসে লিখেছেন, "এখানে খাদ্য সুখের কথা বর্ণনা করা যায় না। এখানকার মতো উত্তম চাল বোধ করি বঙ্গদেশে আর কোথাও নাই।"
বরিশাল বিভাগের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, বাউফলের কমলারাণীর দিঘী, মাধবপাশার দুর্গাসাগর দিঘী, চাখারের শেরে বাংলা একে ফজলুল হক জাদুঘর ও উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান মসজিদসহ অনেক কিছু।
পাকিস্তান আমলে বরিশাল জেলায় মোট ছয়টি মহকুমা ছিল। ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী ও বরগুনা মহকুমার সমন্বয়ে পটুয়াখালীতে একটি জেলা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের ফলে ১৯৮৪ সালে বরগুনা একটি নতুন জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এছাড়া, তৎকালীন বরিশাল জেলার ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও ভোলা মহকুমাকেও জেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ বিভাগে জেলার সংখ্যা মোট ছয়টি।
দেশের খাদ্যশস্য ও মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম মূল উৎস বরিশাল। একে বাংলার ভেনিস বলে অখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও বরিশালে রয়েছে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর। বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বরিশাল এক অসাধারণ স্থান দখল করে আছে।
বাঙালির অনেক কীর্তি আর কৃতিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে বরিশালের নাম। বাংলার বাঘ খ্যাত মহান নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, কবি সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, কবি জীবনানন্দ দাস, চারণকবি মুকুন্দ দাস, মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিজয় গুপ্ত, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টের মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, এ কে এম ফজলুল হক, আব্দুল গফফার চৌধুরী, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুর রব সেরনিয়াবাদ, আরজ আলী মাতুব্বরের মতো বিখ্যাত মানুষদের জন্ম হয়েছিল এখানে।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে বরিশালের ভূমিকাও ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।