পরবর্তীতে বাকলাও বাকেরগঞ্জ নামে পরিচিতি পায়। ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় অবস্থানকালে আগা বাকের প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন। এরপর তার ছেলে আগা সাদেককে ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে মীর ও রাজবল্লভ নির্মমভাবে হত্যা করে।
আগা বাকেরের পর রাজবল্লভ ও তার বংশধরদের হাতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায়।
এরপর ব্রিটিশদের কোম্পানি শাসনের গোড়ার দিকে চন্দ্রদ্বীপ ঢাকার একটি অংশ হিসেবে শাসিত হয়। বাকেরগঞ্জের শাসন কাজ নির্বাহের জন্য ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে একজন সিভিল জজ নিযুক্ত করা হয়। তার সদর দফতর স্থাপিত হয় নলছিটির বারইকরণে।
১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরবনের কমিশনারের দফতরও এখানে নিয়ে আসা হয়। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে এই কার্যালয়ও বাকেরগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ নামে নতুন জেলা গঠিত হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসক মি. উইন্টাল বাকেরগঞ্জ থেকে বর্তমান বরিশালে জেলা সদর দফতর স্থানান্তর করেন। ১৮১২ সালে এ জেলায় ১৫টি থানা ছিল।
বরিশালের নামকরণ নিয়েও অনেক মতভেদ আছে। জানা যায়, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর শাল গাছ থেকেই (বড়+শাল) = বরিশাল নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ দাবি করেন পর্তুগীজ ব্যবসায়ী মি. বেরি এক ললনার প্রেমাসক্ত হন। কিন্তু প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। খবর শুনে প্রেমিকা শেলীও আত্মহত্যা করেন। এই বেরি ও শেলীর নাম থেকে পরবর্তীতে বরিশাল নামকরণ হয়।
কথিত আছে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে 'বরিসল্ট' বলতো। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলোর আকার বড় বড় ছিল বলে 'বরিসল্ট' বলা হতো। এ বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের বর্তমান জনসংখ্যা ৮১,১২,৪৩৫ জন (আদমশুমারি-২০০১) এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৩২। বরিশাল ১৮০০ সাল পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। তবে মুসলমানদের আগমন, ধর্মান্তরিত হওয়া ও হিন্দুদের দেশ ত্যাগের কারণে পরবর্তীতে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য ঘটে। তাছাডা নিম্ন বর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ হাজার জনগোষ্ঠী এ বিভাগে বসবাস করছে।