ওর পড়াশোনায় একদম মন নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ মাথায় ক্রিকেট ভাবনা। কীভাবে কোন শট খেললে ভালো রান করা যাবে, কীভাবে একজন ভালো ক্রিকেটার হওয়া যাবে।
তার স্বপ্ন জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে দেশের জন্য খেলা। তবে মা হারা গৌরবের এই স্বপ্ন পছন্দ নয় বাবার, শিক্ষকদের। সবাই চায় সে শুধু লেখাপড়া করুক, ভালো ফল করুক।
কিন্তু তার সাধনা তো শুধু ক্রিকেট। বারবার পরীক্ষায় ফেইল করেও তার কোনো ভাবান্তর নেই।
সামান্য কেরানীর কাজ করা বাবা সুখময় অতিষ্ঠ হয়ে যান। গৌরবের শিক্ষকের নানা অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গৌরবকে মারধর করেন। তার আঘাতে কোমায় চলে যায় গৌরব।
গরীব হওয়ায় ছেলের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে প্রতিবেশিরা। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সুখময় বুঝতে পারেন তার ভুল।
ছেলেকে সারিয়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তনের আন্দোলনে নামেন সুখময়। উনি ভেবে দেখেন ছোট ছোট শিশুদের উপর যা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা আসলে পড়া নয় বোঝা। একজন শিক্ষক একটি বিষয়ের উপর উচ্চ পর্যায়ে পড়াশোনা করেও সেটা আয়ত্বে রাখতে হিমশিম খান সেখানে শিক্ষার্থীরা ১৩ থেকে ১৪টি বিষয় একসাথে আয়ত্বে রাখবে কী করে?
সুখময় দেখা করে মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তাকে বুঝিয়ে বলে শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ অবস্থার কথা। কথার যৌক্তিকতা বুঝতে পেরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
অন্যদিকে গৌরবও ভালো হয়ে উঠতে থাকে। আবারও ব্যাট হাতে মাঠে নামে গৌরব। আবারও হেসে উঠে গৌরবের ব্যাট।
হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় মহেন্দ্র সোনি ও শ্রীকান্ত মোহতার প্রযোজনায় ২০১১ সালে মুক্তি পায় ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র 'চলো পাল্টাই'। এখানে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যয় আর ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছে আরিয়ান ভৌমিক।
আমার মনে হয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের সাথে জড়িত সবার এই ছবিটি দেখা উচিত। যাতে তারা বুঝতে পারে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অবস্থা। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পরই দেখতে হয় একের পর এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর। শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনই পারে এসব রোধ করতে।
এই ছবিটির সাথে আমাদের সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা সবই মিলে যায়। আমাদের সমাজেও প্রতিভার মূল্য না দিয়ে পাঠ্য বইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট করা হয় শিক্ষার্থীদের। এখনই পরিবর্তন চাই এই ছকে বাঁধা জীবনের। নয়তো অনেক গৌরব ঝড়ে যাবে অলক্ষ্যে।