মাতৃভক্ত বিদ্যাসাগর

খবর পেলেন মা অসুস্থ। মাকে দেখতে যাবেন। বড়কর্তার কাছে ছুটি চাইলেন। আবেদন নাকচ হলে চাকরি ছেড়ে দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। চাকরি বড় কথা নয়। আকাশ ঘন অন্ধকার। দামোদর নদীর তীরে পৌঁছে দেখলেন এই দুর্যোগের রাতে খেয়ানৌকা বন্ধ হয়ে গেছে।

তখন সাঁতরে পার হলেন অন্ধকার উত্তাল দামোদর নদী।

উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ,সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। ১৮২০ সালের ২৬ এ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্ম নেন। তার প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর তার উপাধি। পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মার নাম ভগবতী দেবী।

ঈশ্বরচন্দ্রের পড়াশোনা শুরু হয় নিজগ্রামে। সেখানে পাঠ শেষে আট বছর বয়সে পিতার সাথে কলকাতায় আসেন এবং সেখানে শিবচরণ মল্লিকের বাড়ির পাঠশালায় এক বছর পড়ে ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজে তিনি বারো বছর অধ্যয়ন করেন। সেখানে সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে লাভ করেন 'বিদ্যাসাগর' উপাধি।

১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগে হেড পণ্ডিত হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পাঁচ বছর পর তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন।কিছুদিন পর তিনি অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।

পরে বিশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শক নিযুক্ত হলে তারই তত্তাবধানে কুঁড়িটি মডেল স্কুল ও পয়ঁত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।নিজ অর্থব্যয়ে মেট্রোপলিটন কলেজ(বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) স্থাপন করেন।

শুধু বিদ্যাসাগর নয়, দয়ার সাগর নামেও পরিচিত ছিলেন। দরিদ্র ও আর্তপীড়িত মানুষ কখনই তার কাছ থেকে খালি হাতে ফেরত যেত না।এমনকি নিজের চরম অর্থসংকটের সময়ও তিনি ঋন নিয়ে পরোপকার করেছেন।

ঈশ্বরচন্দ্রই গদ্যে যতিচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার করে বাংলা গদ্যে শৃঙ্খলা আনেন। তাকে বলা হয় বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী। বাংলা সাহিত্যে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তার প্রথম গ্রন্থ 'বেতাল পঞ্চবিংশতি'।

এছাড়াও 'সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা,' 'বর্ণ পরিচয় (১ম ও ২য় ভাগ),' 'শকুন্তলা' 'সীতার বনবাস,' 'আখ্যানমঞ্জরী,'ভ্রান্তিবিলাস' উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। বিধবাবিবাহ ও নারীশিক্ষার প্রচলনে এবং বহুবিবাহ ও বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক
অভিশাপ দূর করতে তার অবদান তুলনারহিত। এজন্যই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন-প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।

এই মণীষী ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com