'কলকাতার স্বর্গীয় টেরিজা'

মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে সারা বিশ্বে জীবন্ত হয়ে আছেন মাদার তেরেসা। তার আসল নাম আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ।

২৬ অগাস্ট ছিল তার ১০৮তম জন্মদিন। ১৯১০ সালের ২৬ অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে জন্মগ্রহণ করেন তেরেসা। যুগের পরিবর্তনে বর্তমানে জায়গাটি ম্যাসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়ে নামে পরিচিত।

বাবা নিকোলো আর মা দ্রানা বয়াজুর পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন তেরেসা। তার বাবা আলবেনিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন।

১৯১৯ সালে আট বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর শিশু তেরেসার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৮ বছর বয়সে তেরেসা গৃহ ত্যাগ করে সিস্টার্স অফ লোরেটো নামের এক সংস্থায় মিশনারি হিসেবে যোগ দেন। সে সময় থেকে নাকি তেরেসার সঙ্গে তার মা ও বোনদের কখনো দেখা হয়নি।

১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিং এ আসেন তেরেসা। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেন।

কয়েক বছর পর ১৯৩৭ সালের ১৪ মে কলকাতায় লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষকতা জীবনও শুরু হয় তেরেসার। সে সময় তিনি একটি স্থানীয় হাসপাতালেও কাজ করতেন।

স্কুলে পড়াতে তার ভালো লাগত। তখন থেকেই ওই মহীয়সী নারী কলকাতার মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে তিনি চিন্তিত ছিলেন।

১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতে বহু মানুষ মারা গেলে ঘটনাটি তার মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪৮ সাল থেকে তেরেসা লোরেটো ত্যাগ করে গরিবদের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন। তখন তিনি তার পোশাকেও পরিবর্তন আনেন।

তেরেসা ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের পর বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমেই শিশুদের জন্য স্কুল স্থাপন করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের নানাভাবে সাহায্য করেন।

মহীয়সী নারী মাদার তেরেসা বলেছিলেন, “যদি তুমি মানুষকে বিচার করতে যাও তাহলে ভালবাসার সময় পাবে না।"

১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তেরেসা দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ আর মৃত্যুপথযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

তেরেসার কাজে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মাননা ছাড়াও তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছেন।

১৯৭৯ সালে ১৭ অক্টোবর তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন। এর ঠিক পরের বছর ১৯৮০ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন।

১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সে বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর পোপ দ্বিতীয় জন পল তাকে স্বর্গীয় আখ্যা দিলে তিনি কলকাতার স্বর্গীয় টেরিজা নামে পরিচিত হন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com