নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

ঘটনাটি ২১ বছর আগের। ১৯৯৫ সালের ২৪ অগাস্ট কয়েক জন পুলিশের কাছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন। নির্যাতন শেষে তাকে হত্যা করে নরপিশাচরা।

এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারাদেশে। সেই থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবছর ২৪ অগাস্ট 'নারী নির্যাতন প্রতিরোধ' দিবস পালন করা হয়।

ইয়াসমিন হত্যার ঘটনায় তীব্র আন্দোলনের মুখে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩১ অগাস্ট ওই মামলার রায়ও হয়। আর ইয়াসমিন ট্রাজেডির আট বছর পর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওই রায় অনুসারে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

দিবসটি  প্রসঙ্গে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম ভয়েস অব আমেরিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "১৯৮০ সাল থেকে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তা দিচ্ছে।

"কিছু কিছু ঘটনায় হঠাৎ একটি স্ফূরণ হয়। যেমনটি ঘটেছিল ইয়াসমিনের ঘটনায়। দিনাজপুরে স্থানীয়ভাবে মহিলা পরিষদ, সম্মিলিত নারীসমাজ ও আরো অনেক সংগঠনসহ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান সবার সম্মিলিত একটি প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। ফলে এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত হয়েছিল।"

ইয়াসমিন ট্রাজেডির দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রতীকি দিবস হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইয়াসমিনের স্মরণে দিনাজপুরে মহিলা পরিষদ ইয়াসমিন স্মৃতিস্তম্ভ নামে একটি মন্যুমেন্ট করেছে। তারা দিবসটি নিয়মিত পালন করে। এই ঘটনা এখন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে গেছে। আমরা সারাবছর নারী নির্যাতন প্রতিরোধের কাজ করছি। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ হয়, প্রতিরোধ হয়, আর মাঝে মাঝে ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

দেশে নারীর সুরক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন আইন। তবুও সমাজে বন্ধ হচ্ছে না নারীর প্রতি সহিংসতা ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুসারে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নয় হাজার নারী ও শিশু। পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এক হাজার তিনশ ৪৫টি।

উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আসুন সবাই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। শুধু নিজের মা, বোন আর সন্তান নয়, নারীকে একজন মানুষ হিসেবেই সম্মান দেই।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com