প্রতিদিনই দেখি বিশাল আকারের ব্যাগ বয়ে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। কারো কারো সঙ্গে ব্যাগ বহনের জন্য মা বাবা সঙ্গে থাকলেও অনেকে এই বোঝা নিয়ে একাই বাড়ি ফেরে।
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় এত বই কি শিশুদের আদৌ প্রয়োজন নাকি এর পেছনে বড় 'বিজনেস প্ল্যান' আছে?
বোর্ডের বই ছাড়াও সহায়ক বইয়ের বাড়তি চাপে দেওয়া হয় শিশুদের। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের বাইরে আরও বেশ কিছু বই পড়তে হয়।
কয়েক জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বোর্ডের বই ছাড়াও সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, ওয়ার্ড বুকসহ আরও কয়েকটি বই পড়ানো হয়। এমনকি তাদের বাংলা, ইংরেজি ব্যাকরণও পড়ানো হয়। এছাড়া আলাদা আলাদা গল্প, কবিতা ও কম্পিউটার শেখার বইও আছে।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে এসব বইয়ের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যায়। বই ছাড়াও বাড়ির কাজ ও স্কুলের কাজের আলাদা খাতাও নিতে হয়।
স্কুল থেকেই সরাসরি কোচিংয়ে যায় অনেক শিশু। ব্যাগে তুলে নিতে হয় সেসব বইও। বই, খাতা, কলম, ডায়েরি, পেনসিল বক্স, জ্যামিতি বক্সে ব্যাগ ভারি হয়ে যায়। এছাড়া টিফিন বক্স ও পানির বোতল তো আছেই।
এটা শিশুর উপর এক ধরণের শারীরিক নির্যাতন। এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এই শিশ্রা যেন কলুর বলদের মতো ভারি ব্যাগ কাঁঢে নিয়ে চোখঢাকা গরুর মতো নম্বরের পেছনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জাকির হোসেন বলেন, ‘১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির সময়। এ সময়টাতে শিশুদের হাড় ও মাংসপেশি অপরিণত ও নরম থাকে। ভারি স্কুলব্যাগ নিয়ে বাচ্চাদের সিঁড়ি বেয়েও উঠতে হয়। এতে ঘাড় সামনে বা পেছনের দিকে কুঁজো হয়ে যায়।
‘ভারি স্কুলব্যাগ বইতে শিশুদের ঘাড়, পিঠ ও মাথা ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট ও মেরুদণ্ড বাঁকাও হয়ে যেতে পারে। এমনকি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
শিশুদের কাছে পড়ালেখাকে আনন্দময় না করে ভয় আর কষ্টকর করে তোলা হয়েছে।
বেশি চাপ দিলে শিশুরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে নষ্ট হয় মেধা। ক্লাস, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর, বাড়ির কাজ সামাল দেওয়া একজন শিশুর পক্ষে খুব কঠিন।
তাই শিশুদের উপর কোনো কিছুই চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু তারপরও বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে শিশুদের ইঁদুর দৌড়ে জুতে দেন বাবা-মা। তারা ভুলে যান পড়ালেখা ছাড়াও শিশুদের খেলাধুলা, বিনোদন ও পর্যাপ্ত বিশ্রামেও দরকার আছে।