স্বাভাবিকভাবেই সিনেমায় একেক সময় একেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কখনও নায়ক, কখনও খলনায়ক, কখনও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাহসী কমান্ডার।
আমি তার সিনেমা দেখেছি। আমি অভিনয় কতটুকু আর বুঝি? তবুও তার অভিনয় আমার দুর্দান্ত মনে হয়েছে। মুখের ভাব বদলানো কিংবা সংলাপ বলা- সবকিছুতেই হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন অতুলনীয়।
অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অফুরান। তাই হয়তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক করলেও জীবনটাকে নিয়ে যান অভিনয়ের পথে।
মঞ্চ নাটকেও ছিল তার সরব পদচারণা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়েই ঢাকা থিয়েটারে যোগদান করেন তিনি।
তার নাট্যজীবনের শুরু হয়েছিল মঞ্চ নাটক দিয়ে। মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তার অভিনীত মঞ্চ নাটকের মধ্যে শকুন্তলা, কেরামত মঙ্গল, মুন্তাসির ফ্যান্টাসি উল্লেখযোগ্য।
টিভির পর্দায় হুমায়ুন ফরিদীর আগমন ঘটে ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মধ্য দিয়ে। তারপর অভিনয় করেছেন একে একে নীল নকশার সন্ধানে, দূরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙনের শব্দ শুনি, বকুলপুর কত দূর, সংশপ্তকসহ আরও বিভিন্ন নাটকে। সংশপ্তক নাটকে কানকাটা রমজানের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনের জায়গা করে নেন হুমায়ুন ফরিদী।
হুমায়ুন ফরিদী 'মাতৃত্ব' নামক এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান। এছাড়া জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া, ভণ্ড, ব্যাচেলর, আহা, পালাবি কোথায়সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
তার প্রযোজিত চলচ্চিত্র ‘পালাবি কোথায়’-তে তুলে ধরা হয়েছিল কর্মজীবী নারীদের বিভিন্ন অসুবিধা ও তাদের সংগ্রামের কথা। সেই চলচ্চিত্রে দুঃশ্চরিত্র বসের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
পর্দার বাইরের জীবনেও তিনি ছিলেন বেশ রসিক আর সরল। শুনেছি একবার এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, "চলচ্চিত্রে কীভাবে এলেন?”
তিনি উত্তরে বললেন, “পরিচালক খোকনের সাথে।"
সাংবাদিক একটু ঘুরিয়ে বললে, “না মানে এফডিসিতে এলেন কীভাবে?
তিনি উত্তর দিলেন, “বেবিটেক্সিতে।"
২৯ মে ছিল এই কিংবদন্তী অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
এরপর ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তের রঙকে মলিন করে চলে যান না ফেরার দেশে।