‘শহিদ জননী’র জন্মদিন

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গেছেন জাহানারা ইমাম।

শহিদ জননী হিসেবে পরিচিত এই মহীয়সী নারীর ৮৮ তম জন্মদিন ৩ মে।

১৯২৯ সালের এই দিনে মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জন্ম নেন তিনি।

তিনি ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।

তার কর্মজীবনের সূচনা হয় শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ শুরু হলে শিক্ষকতা জীবনের ইতি ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি সন্তান শফী ইমাম রুমীকে যুদ্ধে যেতে অনুপ্রেরণা যোগান। রুমী ও তার সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনে তিনি সহযোগিতা করেন।

যুদ্ধের শেষদিকে রুমী শহিদ হন। আর তিনি পরিচিতি পান ‘শহিদ জননী’ হিসেবে।

তার ভাবনায় ছিল দেশের উন্নয়নও। তাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার পূর্ব মুহূর্ত  পর্যন্ত অবহেলা করেননি নিজের কর্তব্য।  

জাহানারা ইমাম একাধারে শিক্ষাবিদ, লেখিকা, কথাসাহিত্যিক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

সন্তানের এই করুণ মৃত্যুতেও দমে যাননি মা জাহানারা ইমাম। শোককে শক্তিতে পরিণত করে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে লড়াই করে যান তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১৯৯২ সালের ২১ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে গড়ে উঠে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। একই সালের ২৬ শে মার্চ তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘গণ আদালত’। সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার হয়।

জাহানারা ইমাম লেখালেখিও করতেন। মুক্তিযুদ্ধের উপর স্মৃতিচারণমূলক তার লেখা গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’ জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি। এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম দলিল বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়াও তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, প্রবাসের দিনগুলি, গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি ইত্যাদি।

১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জয়ী হলেও এই দুরারোগ্য রোগের সাথে আর জয়ী হয়ে উঠতে পারেননি তিনি ।

জাহানারা ইমাম ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন সন্ধ্যা সাতটায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com