প্রতিবন্ধীদের মর্যাদা সংকট

বাধা পেরিয়ে সাফল্য পেলেও নানা সামাজিক সভা, সেমিনারে এখনও অবহেলিত হন বলে অভিযোগ করেছেন জীবনে সফল কয়েক জন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে এমন কয়েক জন মানুষের সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।

বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ মহসীন। বেড়ে উঠা, ক্রিকেট দল গঠন সবকিছুই সংগ্রামে ভরা।

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা মহসীন ২০১৪ সালে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ক্রিকেট দল গঠন করেন।

ছোটকাল থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুকে থাকলেও সে স্বপ্ন যে পূরণ করা সহজ নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, "সমাজের অনেকেই আমাকে কটাক্ষ করে। হাসাহাসি করে। ক্রিকেট খেলার প্রথমদিকে সবাই হাসাহাসি করে বলত তুমিও ক্রিকেট খেল।"

তিনি আরও বলেন, "একবার সরকারি এক সেমিনারে আমার ক্রিকেট খেলার কথা শুনে এক কর্মকর্তাও বলে উঠেন তুমিও ক্রিকেট খেল।”

এছাড়া চলার পথে প্রতিদিনই তাকে নানা ঝালেমায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। প্রতিবন্ধী বলে বাসে না নেওয়া, সিএনজি ভাড়া বেশি চাওয়াসহ আরও অনেক কিছুই।

মহসীনের অভিযোগ, প্রতিবন্ধী বলে সিএনজি চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। অনেক সিএনজি চালক যাত্রী হিসেবে গাড়িতে নিতেও চান না। এতে করে বিড়ম্বনা আর ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাকে।

মোহাম্মদ মহসীনের মতোই ক্রিকেট খেলেন নজরুল ইসলাম। একজন সরকারি চাকুরিজীবি।

সফল এই মানুষটি জানালেন এখনও প্রতিনিয়ত অসংখ্য বাধা-বিঘ্নের মোকাবেলা করতে হয় তাকে।

এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, "একবার দেশের বাইরে একটা কাজে যেতে হয়েছিল আমাকে। বিমানবন্দরে তাকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় হুইল চেয়ারের জন্য।

এ বিড়ম্বনার জন্য অসেচতনতাকেই দায়ী করেন নজরুল ইসলাম।

নজরুল বলেন, “অনেক মানুষ ভাবে আমাদের ঘরে বসে থাকা উচিত। প্রতিবন্ধীদের ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। আমরা বের হলে তারা এমনভাবে কথা বলে যেন ঘর থেকে বের হয়ে এ আমরা কোনো ভুল কাজ করেছি।"

"প্রতিবন্ধী বলে আমাদের শিকলের মাঝে আটকে থাকতে হবে কেন?”

অবহেলার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের এমন এক জায়গায় বসানোর কথা ছিল যেখান থেকে প্রধান অতিথিদের দেখাই যায় না। তারপর সবার অনুরোধে তাদের সুবিধাজনক স্থানে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায় নিয়ে নেওয়া উদ্যোগ ও পদক্ষেপের অধিকাংশই আলোর মুখ দেখেনি বলেও মন্তব্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করা এই কর্মকর্তার।

প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকেন সালমা মাহবুব। বিস্ক্যান ও প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদের হয়ে কাজ করেন তিনি। তিনি নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধীদের সংগ্রামের ব্যাপারে সালমা মাহবুব বলেন, “প্রতিবন্ধীদের কথা সবার ভাবতে হবে। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য হয়ত অনেক নিয়ম কানুন আছে। কিন্তু মানা হচ্ছে কতটা?"

উদাহরণ টেনে সালমা মাহবুব বলেন, “প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ টয়লেটের প্রয়োজন। বিল্ডিং কোডেও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ টয়েলেটের কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ভবনেই এ ব্যবস্থা নেই।"

“শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও প্রতিবন্ধীদের এমন সমস্যা হয়ে থাকে।"

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সালমা মাহবুব বলেন, “আমি একবার শ্রীলঙ্কায় যাই। পাঁচ তারকা হোটেল। কিন্তু টয়লেট প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। এটি দুঃখজনক।"

“এগুলোর ব্যবস্থা করতে কিন্তু অতো টাকা পয়সা লাগে না। এত সুসজ্জিত হোটেল। হাজার হাজার টাকা খরচ করে নির্মাণ করা। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য বিন্দুমাত্র সুবিধা নেই। এগুলো সচেতনতার অভাব।"

এছাড়া প্রতিবন্ধীদের যাতায়াত, চলাচল, বার্তা আদান প্রদানেও সমস্যা হয় বলে মনে করেন সালমা মাহবুব।

বর্তমানে মানুষ কি এ ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা কাজ করছি। হ্যাঁ, মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে।"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com