ফুটপাথে অস্বাস্থ্যকর খাবার

রাজাধানীর বিভিন্ন ফুটপাথে গড়ে উঠেছে নানা অস্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান। সন্ধ্যা নামলেই দোকানগুলো ঘিরে ভিড় জমে উঠে।

সস্তায় আলুর চপ, ডালপুরি, সিঙ্গারা, সমুচা, পেঁয়াজু বিক্রি হয় এই দোকানগুলোতে। প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ এসব খাবার খান।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের পূর্ব দিকে একটু এগিয়েই ফুটপাথে তেলেভাজার দোকানে উপচে পড়া ভিড়। দম ফেলার ফুসরত নেই বিক্রেতাদের।

খাবারের পুষ্টি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা হল বিক্রেতা কবির হোসেনের সঙ্গে। কাজ কাজ করতে করতে তিনি বললেন, "যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। একদিকে এসব ভাঁজতে থাকি আরেকদিক দিয়ে দেখি নেই, তাই ঢেকে রাখার দরকার পড়ে না।"

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিড়ের ভেতর থেকে ভেসে এল একটা বিরক্তিমাখা কণ্ঠ, “আমার খাবার কই মামা? আর কতক্ষণ?”

কবির হোসেনের বললেন, “মামা একটু দাঁড়ান দিতেছি।"

বলেই তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

মজিবর রহমান নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।

এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কিনা জানতে চাইলে বলেন তিনি, “এইসব খাবার অস্বাস্থ্যকর আমরা সবাই জেনেই খাচ্ছি।

"দামি কোনো রেস্টুরেন্টে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তার চেয়ে সস্তায় এটা ভালো।"

এই দোকানের নিয়মিত ক্রেতা জুবায়ের হোসেন। তিনি নাকি প্রায়ই এই দোকানে আসেন।

তিনি বলেন, "এখন তো সব খাবারেই ভেজাল। তাই বাছবিচার করে লাভ নেই।"

দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া রুবাইয়াত আল হাসান বলে, “ক্লাশ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ক্ষুধা লাগলে তখন বাধ্য হয়ে খাই। দাম কম বলে সমস্যাও হয় না।"

এ নিয়ে বিবিসির করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবির গবেষকরা বিক্রেতার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছেন অধিকাংশ খাবারে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। এর প্রধান কারণ বিক্রেতাদের অসচেতনতা।

প্রতিবেদনে আইসিডিডিআরবির সহযোগী বৈজ্ঞানিক ড. আলেয়া নাহিদ জানান, “পথ-খাবার যারা বিক্রি করেন তাদের বসার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তারা ফুটপাথেই বসছেন। ফলে ধুলোবালি জীবাণু সহজেই মিশে যাচ্ছে। তারা পানি বহন করছেন না। খাবার বানাচ্ছেন হাত দিয়ে। কিন্তু হাত ধুতে পারছেন না। ফলে তাদের হাত থেকে রোগজীবাণু মিশে যাচ্ছে খাবারে।"

আনন্দবাজার পত্রিকায় খাদ্যে ভেজাল নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরী বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে এখন কম বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগ, পেটের অসুখ, ক্যানসার, স্ট্রোক, স্নায়ু রোগের প্রবণতা বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসবের জন্য দায়ী খাদ্যাভ্যাস।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে এর বিপদ নিয়ে সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু সচেতনতা বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com